Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ২৬ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১৪:৩৬, ২৬ মার্চ ২০২৫

ফিরে দেখা হাসিনার আপোসকামী রাজনীতি ১৯৮৮

হাসিনার অনুপস্থিতে আওয়ামিলীগের নেতৃত্বে খালেদা জিয়া

হাসিনার অনুপস্থিতে আওয়ামিলীগের নেতৃত্বে খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মতিয়া চৌধুরী, ইনু, নানকদের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিলো, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরকাল মনে রাখা হবে। ওইদিন আওয়ামীলীগ ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু এক রহস্যময় কারণে শেখ হাসিনা এ প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করেননি। অবশেষে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন।

২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়, যা ছিলো শেখ হাসিনা এবং তার দলের বিরুদ্ধে এক পরিকল্পিত আক্রমণ। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে একটি জনসভা আয়োজন করেছিলেন, কিন্তু সে সভায় উন্মুক্ত জনসভা শুরুর আগেই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এ হামলায় ২৪ জন আওয়ামীলীগ কর্মী নিহত হন এবং আরও অনেকেই আহত হন।

এ ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং আওয়ামীলীগসহ সকল বিরোধী দল সরকারকে তীব্রভাবে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু এক রহস্যময় কারণে শেখ হাসিনা এ প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করেননি।

বেগম খালেদা জিয়ার সাহসী নেতৃত্ব

এ সময় যখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো, তখন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্বের প্রমাণ রেখে মাঠে নামেন। একদিকে, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি, অন্যদিকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ- এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া তার দলের নেতা-কর্মীদের সাহস জুগিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন।

এ সমাবেশে শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়, ৮ দলীয় জোটের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অংশগ্রহণ করে। উল্লেখযোগ্য যে, এ ৮ দলীয় জোটের অংশ ছিলো আওয়ামীলীগও, যাদের কর্মীরা তখনও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি ও তার দলীয় কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টির পর, বেগম খালেদা জিয়া তাদের নেতৃত্বে আসেন এবং প্রতিবাদ মিছিলটি সফলভাবে পরিচালনা করেন।

বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেদিন রাজপথে তার আগমন ছিলো ঐতিহাসিক। ১৯৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি, বেগম খালেদা জিয়া সেদিন রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। তার এ সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে, তাকে জনগণের সামনে এক শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে প্রমাণিত হতে দেখা যায়।

আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ও বাস্তবতা

অনেকেই সে দিনের ঘটনা তুলে ধরেছেন যে, সেদিন খালেদা জিয়া যেভাবে আওয়ামীলীগের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করেছিলেন, তা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অস্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় ঘটনা ছিলো। সে সময় আওয়ামীলীগের অনেক উচ্চপদস্থ নেতা, যেমন ইনু, মতিয়া চৌধুরী, নানক, বর্তমান সময়ের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন, তারা নিজের দলের প্রতিষ্ঠাতা নেত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।

একজন আওয়ামী প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আমি সে ঘটনার সাক্ষী। যেভাবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে  বিএনপি এবং ৮ দলীয় জোটের অন্যান্য নেতারা প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন, তাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছিলো।

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি: রহস্য ও প্রতিবাদ

শেখ হাসিনার এ অনুপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিলো। ১৯৮৬ সালে যখন শেখ হাসিনা এরশাদের সাথে আপোস করে নির্বাচনে গিয়েছিলেন, তখন থেকেই তার এবং এরশাদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু ১৯৮৮ সালের ওই ঘটনার পর, যেখানে শেখ হাসিনার দলের ২৪ জন কর্মী নিহত হয়, তাতে আশ্চর্যজনকভাবে তিনি প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা ছিলো একটি রহস্যময় পরিস্থিতি, যেখানে শেখ হাসিনা নিজ দলের প্রাণঘাতী হামলার পরেও প্রতিবাদে শামিল হতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তিনি বারবার এরশাদের সঙ্গে আপোস করেছেন। ৮৬-তে আপোস করে এরশাদের সঙ্গে লং-ড্রাইভ শেষে নির্বাচনে গেছেন, ৮৮-তে নিজ দলের ২৪ জন কর্মী-সমর্থকের প্রাণহানির পরও প্রতিবাদ মিছিলে আসেননি।

অনেকেই বলেছিলেন, তখন তিনি এরশাদের সঙ্গে আপোস করতে শুরু করেছিলেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন সরকার তথা এরশাদের বিরুদ্ধে কোনো তীব্র প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেননি।

বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় নেতৃত্ব

এদিকে, বেগম খালেদা জিয়া তার দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে সেদিন প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি শুধু বিএনপির নেতা নন, বরং তিনি ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম। তার নেতৃত্বের ফলে সেদিনের প্রতিবাদ মিছিলটি ব্যাপক সমর্থন পায় এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। তার এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল, যা পরে ১৯০ এ প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ১৯৯১ সালে বেগম জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথও প্রশস্ত করেছিলো।

১৯৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ ছিলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। যেখানে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি এবং বেগম খালেদা জিয়ার সাহসী নেতৃত্ব দেশবাসীকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিলো। সেদিন, খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি একজন শক্তিশালী ও সাহসী নেত্রী, যিনি দেশের সংকটময় মুহূর্তে নিজের দলের কর্মী ও জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

সবার দেশ/এমকেজে