(গল্প নয় সত্যি)
বাবারা এমন কেনো?

আমিও একজন বাবা। আমার মেয়েও এবার ভাসির্টির এডমিশন পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কেমন; কোন বাবার মেয়ে না থাকলে তো বোঝানো যাবে না। নিচের সংবাদটি পড়তে পড়তে চোখের জল নাক বেয়ে গড়িয়ে পড়লো ল্যাপটপে। অথচ একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে দিনরাত কত মর্মান্তিক খবরই না আমাকে পড়তে হয়, লিখতে হয়, পরিবেশন করতে হয়। তবে এমনটা সচরাচর হয়না।
ঢাকার এক হৃদয়বিদারক ঘটনায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ল্যাপটপ কিনে না দেয়ায় এক কিশোরী তার বাবাকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরি দিয়ে ১৩ বার আঘাত করেছে। গুরুতর আহত বাবা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তবে এ মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যেও বাবার অপরিসীম ভালোবাসা ও ক্ষমার মানসিকতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায়। অভিযুক্ত কিশোরী, যার বয়স প্রায় ১৭ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাবার কাছে একটি ল্যাপটপ কেনার দাবি জানিয়েছিলো। বাবা, একজন মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী, আর্থিক সংকটের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ল্যাপটপ কিনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়ে রাতে বাবার ঘুমন্ত অবস্থায় তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরি দিয়ে একটানা ১৩টি আঘাত করে। প্রতিবেশীদের সহায়তায় আহত বাবাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা পুলিশের কাছে এক আবেগঘন অনুরোধ জানিয়েছেন, যা শুনে উপস্থিত সবাই হতবাক। তিনি বলেন, স্যার, আমার মেয়েকে থানায় নিয়ে যাবেন না, দয়া করে। অন্ধকার ঘরে সে ভয় পাবে। বাচ্চা মানুষ, ভুল করে ফেলেছে। তার সামনে ভার্সিটির এডমিশন পরীক্ষা। এতে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে, চাকরি পাবে না। তাকে ছেড়ে দিন। আর তাকে বলবেন, আমি বেঁচে থাকলে এ মাসের বেতন দিয়ে তার জন্য নতুন ল্যাপটপ কিনে দেবো। আর যদি মারা যাই, আমার আলমারিতে জমানো ৪০ হাজার টাকা আছে, সেটা তার হাতে দিয়ে বলবেন, তার পছন্দের ল্যাপটপ কিনে নিতে।
এটাই হলো বাবা,,,
এ বাবার পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি, তবে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মধ্যম সারির চাকরি করেন। তার একমাত্র মেয়ে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ঘটনার পর মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়নি, তবে তদন্ত চলমান। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বাবার এ বক্তব্যের পর আমরা সবাই মুগ্ধ। তবে আইনি প্রক্রিয়া মেনে তদন্ত চলবে।
এ ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও ক্ষমার প্রশংসা করছেন। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটাই বাবা। জীবন-মৃত্যুর মুহূর্তেও শুধু মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন। আবার কেউ কেউ মেয়ের এ আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এতো ছোট বিষয়ে এমন নৃশংস কাজ কীভাবে সম্ভব?
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হতাশা, রাগ বা প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণে এ ধরনের চরম আচরণ দেখা যেতে পারে। তারা পরিবারের মধ্যে উন্মুক্ত যোগাযোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ঘটনা শুধু একটি মর্মান্তিক সংবাদ নয়, বরং একজন বাবার অসীম ভালোবাসা ও ত্যাগের গল্প, যা সমাজের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সবার দেশ/কেএম