রিটার্ন জমার সময় তৃতীয় দফা বাড়লো
রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমায় ভোগান্তি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দেশের সাধারন মানুষ। এর ফলশ্রুতিতে টানা দুই দফায় দুই মাস সময় বাড়িয়েও জমা পড়েনি প্রত্যাশিত রিটার্ন। তাই ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের জন্য তৃতীয় দফায় আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আয়কর আইনের ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রিটার্ন জমার সময় একমাস বাড়াতে পারে। সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিলো। এরপর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে আরও একমাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি করে। তবে এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত রিটার্ন জমা না পড়ায় আরও ১৫ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রিটার্ন জমার সময় বাড়াতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। শিগগির এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। আয়কর আইনের ৩৩৪ ধারার (খ) উপধারা অনুযায়ী, মহামারী, অতিমারী, দৈব দুর্বিপাক ও যুদ্ধকালীন সময় সরকার আদেশ দিলে বোর্ড রিটার্ন জমার সময় বাড়াতে পারবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি ও কম্পানি পর্যায়ের ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৭ জন রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৯ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এ রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৩। রাজস্ব আদায় হয়েছিল চার হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলণায় রিটার্ন জমা ও আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও প্রত্যাশার তুলণায় কম।
যদিও সফল ক্যাম্পেইন ও ব্যাপক প্রচারের ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫২ জন। গতবছর ৪৩ লাখেরও বেশি করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন। চলতি বছরে এনবিআরের আশা ছিল ৫০ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে।
কিছুক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হলেও ই-রিটার্ন পদ্ধতি এখনো পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক করদাতার। করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় পড়ছেন। সে সমস্যা সমাধানের জন্য আসছেন নির্দিষ্ট কর অঞ্চলে।
এছাড়া বছরের শেষ প্রান্তে বাসা ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ, সন্তানের স্কুলের ফি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জেরে বিপাকে পড়েছেন করদাতারা। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় পড়েছেন করদাতারা। তারা সার্ভারে অতিরিক্ত চাপ, সংশোধনী রিটার্নের সুযোগ না থাকা, রেজিস্ট্রেশনে সমস্যা, রিটার্নের ফাইনাল প্রিভিউ ডাউনলোডে সমস্যা, স্বর্ণ বা ফার্নিচারের মূল্য অজানা অপশন না থাকায় শূন্য দেয়া, কলসেন্টারে ফোন দিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়া, সমন্বয়ের সমস্যা, পাসওয়ার্ড রিসেটে হয়রানি, গতবারের সম্পদের বিররণ দেখা না যাওয়া, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, এফডিআরের ডাটা ইনপুটে জটিলতা সহ নানা সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাওয়া আশানুরূপ রিটার্ন না পরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অনেক করদাতা এখন দেশের বাইরে।
অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকে আবার প্রকাশ্যে নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতিও স্বাভাবিক গতি পায়নি। এর প্রভাব পড়েছে রিটার্ন দাখিলে।
সবার দেশ/এমকেজে