Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৩০ মার্চ ২০২৫

এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ২০ শতাংশ

আমদানি-রফতানির পালে লেগেছে হাওয়া

ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ দেশে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮.৪৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩.৮ শতাংশ বেশি।

আমদানি-রফতানির পালে লেগেছে হাওয়া
প্রতীকি ছবি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আমদানি এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ঊর্ধ্বগতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ দুই খাতে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আমদানি কার্যক্রম সম্প্রসারণে সক্ষমতা বেড়েছে।

আমদানি এলসি খোলায় প্রবৃদ্ধি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৬.২৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি) খোলা ৫.২২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৯.৯২ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) মোট আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশের আমদানি কার্যক্রমে গতি ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়।

এলসি নিষ্পত্তিতেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি

এলসি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ নিষ্পত্তি হয়েছে ৫.৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিষ্পত্তি হওয়া ৪.৭৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২০.৫৯ শতাংশ বেশি। এ বৃদ্ধি আমদানি প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং ব্যাংকিং খাতে ডলারের উন্নত তারল্যের প্রমাণ বহন করে।

রেমিট্যান্সের ভূমিকা

রেমিট্যান্স প্রবাহ এ প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ দেশে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮.৪৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩.৮ শতাংশ বেশি। এ অর্থ প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করেছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

আমদানি ব্যয়ের চিত্র

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি এলসি পেমেন্ট হয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৪.১৯ বিলিয়ন ডলার। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পেমেন্ট ১০.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা উৎপাদন খাতে ইতিবাচক গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। তবে, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পেমেন্ট ২৫ শতাংশ এবং ইন্টারমিডিয়েট গুডস আমদানির পেমেন্ট ৮.৫ শতাংশ কমেছে। এ হ্রাস ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের গতিকে কিছুটা মন্থর করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

রফতানি আয়ের অবদান

রফতানি আয়ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি আয় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত এ আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির এই ঊর্ধ্বগতি দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার একটি ইতিবাচক সংকেত। তবে, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ইন্টারমিডিয়েট গুডস আমদানির হ্রাস দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ও বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের বৃদ্ধি আমদানি সক্ষমতা বাড়ালেও, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগে মনোযোগ দেয়া জরুরি।

সামগ্রিকভাবে, আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি আশাব্যঞ্জক চিত্র তুলে ধরেছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারকে শক্তিশালী করছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমদানি কাঠামোর ভারসাম্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদরা এই প্রবণতা পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো যায়।

সবার দেশ/কেএম