মার্চে প্রবৃদ্ধি ১১.৪৪ শতাংশ
দেশের রফতানি আয়ে সুখবর, পোশাক খাতেই ছাড়ালো ৩০ বিলিয়ন ডলার
পোশাক খাতেই আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো, কৃষিপণ্য টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে।

বাংলাদেশের রফতানি খাত আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে দেশের মোট পণ্য রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪২৪ কোটি ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
সোমবার (৭ এপ্রিল) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইপিবি জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে— অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত—বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ডলারের পণ্য।
তৈরি পোশাকে অব্যাহত আধিপত্য
রফতানির মোট আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাত থেকেই মার্চ মাসে রফতানি হয়েছে ৩৪৪ কোটি ডলারের পোশাক, যা আগের বছরের মার্চের তুলনায় ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে তৈরি পোশাক খাতে মোট আয় হয়েছে ৩ হাজার ২৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, রফতানিতে প্রবৃদ্ধির অর্থ, বাংলাদেশে কার্যাদেশ বেড়েছে। আমাদের ছয়টি ইউনিটই এখন পূর্ণ সক্ষমতায় চালু আছে। এটি দেশের পোশাক খাতের জন্য বড় সুখবর।
ঋতুভিত্তিক অর্ডার ও আগাম চালানের প্রভাব
পোশাক খাতে মার্চে এ প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর উৎসবকালীন কেনাকাটা—ব্ল্যাক ফ্রাইডে, থ্যাংকস গিভিং, বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ। বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, ঈদের আগেই মার্চে কিছু অর্ডার পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের চূড়ান্ত চালানও গেছে এ সময়। ফলে মার্চে রফতানিতে ইতিবাচক ধাক্কা এসেছে।
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। শুল্ক নিয়ে ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কৃষিপণ্য টপকে দ্বিতীয়
রফতানিতে চামড়ার চেয়ে এবার এগিয়ে গেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এ খাতে রফতানি হয়েছে ৮০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি হয়েছে ৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলার—৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। তবে মার্চ মাসে এ খাতের রফতানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে—২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
মাসভিত্তিক রফতানি প্রবণতা
রফতানি আয়ে গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক উন্নতি লক্ষ করা গেছে:
- জুলাই-আগস্ট: কোটা সংস্কার আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রবৃদ্ধি কমেছিলো
- সেপ্টেম্বর: ১৬% প্রবৃদ্ধি, রফতানি ৩৮৬ কোটি ডলার
- অক্টোবর-নভেম্বর: যথাক্রমে ১৮.৬৮% ও ১৪% প্রবৃদ্ধি
- ডিসেম্বর: ১৮% প্রবৃদ্ধি, আয় ৪১১ কোটি ডলার
- জানুয়ারি: ৫.৭০% প্রবৃদ্ধি
- ফেব্রুয়ারি: ২.৭৭%
- মার্চ: ১১.৪৪% প্রবৃদ্ধি, আয় ৪২৪ কোটি ডলার
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও শঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রম স্থিতিশীলতা ফেরায় অর্ডার বেড়েছে। তাছাড়া সরকারের আর্থিক ইতিবাচক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলো সময়মতো এলসি খোলায় অর্থ যোগান দেয়া, এলসির পেমেন্ট দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা সময়মতো পণ্য সরবারহ করতে পেরেছে। তবে আমদানি খাতে শুল্ক-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এবং বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তন ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
রফতানি প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা দেশের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। তৈরি পোশাক ও কৃষিপণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য খাত থেকেও রফতানি আয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে শুল্কনীতি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর থাকবে এ প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ নির্ভরতা।
সবার দেশ/কেএম