Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ৯ এপ্রিল ২০২৫

ভারত বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর ১৯৯৪ সালের (GATT) এর Article V অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলোকে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য অবাধ ও বৈষম্যহীন ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। ভারতের এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক হলে WTO-র নিয়মাবলীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ভারত বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রফতানি পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠাতে ভারতীয় স্থলবন্দর ব্যবহারের যে বিশেষ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চালু ছিলো, তা বাতিল করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক বোর্ড (CBIC)। এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রফতানি কার্যক্রমে বিশেষত ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

হঠাৎ জারি হলো বাতিল নির্দেশনা

ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা CBIC মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৯ জুনের সার্কুলার বাতিলের কথা জানায়। সে সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের জন্য ভারতের স্থল কাস্টমস স্টেশন (LCS) ব্যবহার করে সমুদ্র ও বিমানপথে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয়েছিলো।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, এ সুবিধা কার্যকর থাকাকালে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের খরচ ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিলো। বাতিল নির্দেশনার ফলে এ সুবিধা আর থাকবে না, এবং পণ্য পরিবহনে বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়বে।

কূটনৈতিক টানাপোড়েনই কি কারণ?

CBIC-এর বিজ্ঞপ্তিতে বাতিলের নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা না হলেও, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক বিশ্লেষণে দাবি করেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর এবং সেখানে দেয়া বক্তব্য এ সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।

চীন সফরের সময় চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব সাতটি রাজ্য ভূমিবেষ্টিত। আমরা এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এটি একটি বিশাল সুযোগ, যা চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সহায়ক হতে পারে।

এ বক্তব্য ভারতের কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এ মন্তব্যকে ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ এবং ‘ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে—

  • বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের খরচ এবং সময় দুই-ই বাড়বে।
  • ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে রপ্তানি কার্যক্রমে বিলম্ব এবং অতিরিক্ত লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।
  • বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হ্রাস পেতে পারে।

বিশেষ করে ভুটান ও নেপালের বাজারে বাংলাদেশের প্রভাব কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।

WTO-এর নিয়ম কি লঙ্ঘিত হলো?

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর ১৯৯৪ সালের General Agreement on Tariffs and Trade (GATT) এর Article V অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলোকে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য অবাধ ও বৈষম্যহীন ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এ সিদ্ধান্ত WTO-র নিয়মাবলীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে, বিশেষত যদি এটি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে।

দক্ষিণ এশীয় বাণিজ্যে উত্তাপ?

এ সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মুক্ত বাণিজ্য প্রবাহের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত নতুন ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইঙ্গিতও দেয়।

ভারতের হঠাৎ ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেবল বাণিজ্য নয়, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনেও ঢেউ তুলেছে। বাংলাদেশকে এখন কৌশলগত ভারসাম্য এবং বিকল্প বাণিজ্যপথ খুঁজে নিতে হতে পারে।

সবার দেশ/কেএম