ভ্যাট-মুদ্রানীতি নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ
মুদ্রানীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের সমন্বয়হীনতা রয়েছে- এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বর্তমান রাজস্ব দিয়ে সরকার বাজেট মেটাতে পারছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে কার্যত অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করে চলতি বছরের মাঝপথে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলো, যা জনগণের ওপর চাপ বাড়াবে।
ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধিতে বিএনপি যে ১০টি সংকটের আশঙ্কা করছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে প্রধান সংকটগুলো হলো:
১. মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি: ১৩ শতাংশের উপরে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, যার ফলে সঞ্চয় কমবে এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রবণতা বাড়বে।
২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া: ৫.৮২ শতাংশের নিম্নমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও কমবে, যার ফলে আয় বৃদ্ধি না হয়ে কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে।
৩. চরম দারিদ্র্য বৃদ্ধি: ৪ কোটি ১৭ লাখ দরিদ্র জনগণের সংখ্যা এবং মূল্যস্ফীতি এবং মজুরি বৃদ্ধির অমিলের ফলে দরিদ্র জনগণের জীবন আরও কঠিন হবে।
৪. জ্বালানির উচ্চ খরচ: জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা জীবনযাত্রার খরচ বাড়াবে।
৫. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর করের চাপ বৃদ্ধি: ট্যাক্স এবং ভ্যাট নিবন্ধন সীমা কমানোর কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আরও চাপের মধ্যে পড়বে এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি বাড়বে।
৬. ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধি: উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে ব্যবসায়িক সংকট ও বেকারত্ব বাড়বে।
৭. ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস: ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমবে, যার ফলে বাজারের চাহিদা কমে যাবে।
৮. নিম্নআয়ের জনগণের জীবনযাত্রার দুরবস্থা: নিম্নআয়ের মানুষদের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে।
৯. বিনিয়োগের পতন: ব্যবসায় বিনিয়োগ কমবে, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
১০. রপ্তানি প্রতিযোগিতা হ্রাস: রপ্তানির প্রতিযোগিতার ক্ষমতা কমে যাবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
মহার্ঘ্য ভাতা মূল্যস্ফীতির উপর খানিকটা চাপ বাড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। দ্রুত নির্বাচনের দিকে গেলে অনেক সমস্যার সমাধান আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা পূর্বেও বলেছি যে এ অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব। তাই সরকারকে অনুরোধ করছি, আপনারা নীতিমালা প্রণয়নে জনগণের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় নিন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজস্ব সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উপায় বিবেচনা করার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়ার কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সাধারণ জনগণের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সংকটগুলো সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জনগণের জীবনযাত্রায় গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে দরিদ্র জনগণের জন্য।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জাবিউল্লাহ।
সবার দেশ/এমকেজে