স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, লাশ ফেলা হয় হাতিরঝিলে
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) হাতিরঝিল থেকে এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো মেয়েটি। এ ঘটনায় গ্রেফতার দুই যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, হাত–পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে হত্যা করেন তারা।
গত ১৬ জানুয়ারি নিখোঁজ হয় ওই কিশোরী। ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা। এরই প্রেক্ষিতে ২৭ তারিখে একটি মামলা করেন তিনি। এরপর কিশোরীটির মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে ৩০ জানুয়ারি রবিন নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাব্বি মৃধা নামের আরও এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।
দুজনকে গ্রেফতারের পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এরপর রবিন ও রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, পাঁচজন মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। এতে তার মৃত্যু হলে রিকশায় করে লাশ হাতিরঝিলে ফেলে দেয়া হয়।
রাব্বি ও রবিনের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে আজ হাতিরঝিল থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মেয়েটিকে হত্যার দায় স্বীকার করে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রবিন ও রাব্বি মৃধা। সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) মো. নাসিম এ-গুলশান বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। পরে তাকে মহাখালীর একটা বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করেন রবিনসহ পাঁচজন। ধর্ষণের সময় কিশোরীটির হাত-পা বাঁধা এবং মুখে কাপড় গোঁজা ছিলো। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর তিনজনকে গ্রেফতার অভিযান চলছে।
যেভাবে হত্যা করা হয়
হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরীর বাবা ও মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ওই কিশোরীর বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর দক্ষিণখানে। ১৬ জানুয়ারি বেলা দুইটার দিকে সে মা–বাবাকে বলেছিল, জরুরি কেনাকাটা করে দ্রুত বাসায় ফিরবে। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ফেরেনি।
কিশোরীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে সেদিন দুপুরে বেরিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় ফেরেনি। তখন আমি আত্মীয়স্বজনসহ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু মেয়ের খোঁজ না পেয়ে তিন দিন পর দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করি।
মেয়েটির বাবা আরও বলেন, আমার যে মেয়েটি স্কুলে যেতো, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতো, আজ সে লাশ হয়ে বাসায় ফিরেছে। যারা আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা বলেন, মেয়েটির বাবা থানায় জিডি করার পর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করি। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে মেয়েটির সন্ধান না পেয়ে তার মুঠোফোনের সিডিআর (ফোনকলের বিস্তারিত তথ্য) জোগাড় করি। সেখানে একটি সন্দেহজনক নম্বর পাই। সেটিই ছিল রবিনের মুঠোফোন নম্বর।
রবিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হলো, সে বিষয়ে তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মো. নাসিম এ-গুলশান বলেন, রবিনের মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কিশোরীর সঙ্গে ঘটনার দিনই (১৬ জানুয়ারি) তার প্রথম কথা হয়েছিলো। রবিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে মহাখালীর একটি বাসার সন্ধানও পাওয়া যায়। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাব্বিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রথমে দুজনের কেউই কিশোরীর বিষয়ে তথ্য দিচ্ছিলেন না। পরে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান।
সহকারী কমিশনার নাসিম এ-গুলশান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিন স্বীকার করেন, কিশোরীটিকে ‘ফাঁদে ফেলে’ সেদিন দুপুরে মহাখালীর একটি বাসায় নিয়ে যান তারা। এরপর তার হাত–পা বেঁধে ফেলেন। মুখে গুঁজে দেন কাপড়। তারপর পাঁচজন মিলে তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে কিশোরী অচেতন হয়ে পড়ে। পরে সে মারা গেলে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কিশোরীকে হত্যা করার পর লাশ বস্তাবন্দী করা হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি ঘটনার দিন মধ্যরাতেই মহাখালী থেকে রিকশায় করে লাশ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে আসেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। লাশটি সেতু থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দেন রবিন। এরপর যে যার বাসায় চলে যান।
সহকারী কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) মো. নাসিম এ-গুলশান জানান, আসামিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিন পেশায় একজন গাড়িচালক। রাব্বি মৃধার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অভিযুক্ত অন্য তিনজনও রবিনের পূর্বপরিচিত।
কিশোরীর বাবা বলেন, আমার স্বপ্ন ছিলো, মেয়েটি লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু এ সন্ধ্যার সময় আমি মেয়েকে কবরে শুইয়ে দিচ্ছি। আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে আর কোনো মেয়ে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়।
সবার দেশ/কেএম