বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এখন ‘শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করা শুধুমাত্র আবরারের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং এটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি বার্তা – যে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানী ঢাকা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, এখন থেকে নতুন নামে পরিচিত হবে – ‘শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ’। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এ নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি ছাত্রলীগ। ওই ঘটনা বাংলাদেশে নিন্দার ঝড় তোলে এবং দেশের তরুণ সমাজসহ সাধারণ জনগণ প্রতিবাদে মুখর হয়। আবরারের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি ব্যক্তিগত হত্যাকাণ্ড ছিলো না, বরং এটি সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতির প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হয়। আবরারের হত্যা ছিল নৃশংস এবং অমানবিক, যা একদিকে পুরো দেশের শিক্ষাঙ্গন এবং সমাজব্যবস্থাকে অবাক ও হতাশ করেছে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান এক বিবৃতিতে জানান, নামকরণ সংক্রান্ত কমিটি প্রস্তাব অনুযায়ী বোর্ড সভায় এ নাম পরিবর্তন অনুমোদিত হয়। এরপর তা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয় এবং তাদের অনুমোদন পাওয়ার পর চূড়ান্তভাবে নতুন নামকরণ সম্পন্ন হয়। রাসেল রহমান বলেন, এটি আমাদের একটি সামষ্টিক সিদ্ধান্ত। আমাদের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি নামকরণ নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা সামাজিক ন্যায় এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করা শুধুমাত্র আবরারের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং এটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি বার্তা – যে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছিলো সে সময়ের একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, তবে তার মৃত্যু দেশের তরুণ সমাজকে ন্যায্যতার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তার মৃত্যুর পরপরই সারা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, তাদের উদ্দেশ্য শুধু আবরারের স্মৃতিকে সম্মান জানানো নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে তারা দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে এ বার্তা দিতে চায় যে, সমাজে যেকোনও ধরনের অন্যায় এবং অবিচারের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে দাঁড়ানো জরুরি।
এছাড়া, শহীদ আবরার ফাহাদ এর নামেই বিভিন্ন সড়ক, ভবন এবং স্থাপনার নামকরণ করার প্রস্তাবও গণমাধ্যমে এসেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং যুব সমাজের জন্য আরও সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরির দিকে ধাপ বাড়ানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ নামকরণ শুধু এক তরুণের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ নয়, এটি আমাদের একটি শিক্ষাও দেয় – যে কোনও ধরনের সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব। আবরার ফাহাদের নামকরণের মাধ্যমে সরকার এবং সিটি করপোরেশন একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে যে, সমাজে শান্তি, সহানুভূতি এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব মানুষকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হিসেবে পরিচিত। এ সড়কটি ঢাকার প্রধান শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে সংযুক্ত করে। সেখানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সড়কটির নাম পরিবর্তন, আবরারের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
‘শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ’ নামকরণ শুধু একটি সড়কের নাম পরিবর্তন নয়, এটি দেশের শোক এবং আন্দোলনের একটি প্রতীক। দেশবাসী এ পরিবর্তনকে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে গ্রহণ করবে এবং আশা করা যাচ্ছে, এটি আগামী দিনের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।
সবার দেশ/কেএম