Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:০৭, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০২:১১, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মিলনমেলা

চৈত্রসংক্রান্তি কনসার্টে মাতলো রাজধানী

চৈত্রসংক্রান্তি কনসার্ট বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য ও বৈচিত্র্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে এ আয়োজন শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শিল্পীদের মিলনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছে।

চৈত্রসংক্রান্তি কনসার্টে মাতলো রাজধানী
ছবি: সংগৃহীত

চৈত্রের শেষ দিনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের অংশগ্রহণে জমজমাট ব্যান্ডশো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছিলো দর্শকরা। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে গতকাল (১৩ এপ্রিল ২০২৫) বিকাল পৌনে ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ বর্ণাঢ্য আয়োজন চলে।

দেরিতে শুরু, তবু উৎসবের আমেজ

অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিলো দুপুর ২টায়। কিন্তু চৈত্রের তপ্ত রোদ আর গরম বাতাসে দর্শক ও শিল্পীদের অপেক্ষা করতে হয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ততক্ষণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ধু ধু মাঠে দর্শকদের ভিড় জমতে শুরু করে। মঞ্চ প্রস্তুত খাকলেও শিল্পীরা তাঁবু ছেড়ে গাছের ছায়ায় অপেক্ষা করছেন। বিকালে অনুষ্ঠান শুরু হতেই দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং সচিব মো. মফিদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেশসেরা ব্যান্ডশিল্পী এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের নিয়ে এমন ব্যান্ডশো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। তিনি সবাইকে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।

বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা

অনুষ্ঠানের শুরু হয় ঢাকঢোলের বাদ্যে, যা চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবমুখর আবহ তৈরি করে। এরপর বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক লাঠিখেলা প্রদর্শন করে শিল্পীরা। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাদের সংস্কৃতি ও ভাষায় পরিবেশনা উপস্থাপন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন:

  • ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড ‘ইমাং’ এবং খাসিয়া জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড ‘ইউনিটি’ তাদের ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবেশন করে।
  • বান্দরবানের ‘বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল’ এবং মারমা জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড ‘চিম্বুক’ তাদের স্বতন্ত্র সংগীত দিয়ে মঞ্চ মাতায়।
  • চাকমা জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড ‘ইনভোকেশন’ এবং গারো জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড ‘এফ মাইনর’ ও ‘দি রাবুগা’ তাদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরে।

জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোও ছিল এ আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ:

  • ‘দলছুট’, ‘এভোয়েড রাফা’, ‘ভাইকিংস’, ‘লালন’, ‘ফিডব্যাক’, ‘আর্টসেল’ এবং ‘ওয়ারফেজ’ তাদের দর্শকপ্রিয় গান দিয়ে মঞ্চে ঝড় তোলে।
  • বিশেষ মুহূর্ত ছিল ‘ওয়ারফেজ’ ব্যান্ডের শেষ পরিবেশনা। তারা ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের জন্য মাইকেল জ্যাকসনের ‘হিল দ্য ওয়ার্ল্ড’ গানটি পরিবেশন করে দর্শকদের সঙ্গে মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন <<>> পার্বত্য জেলায় চৈত্র সংক্রান্তির ছুটি ১৩ এপ্রিল

সাংস্কৃতিক মিলনমেলা

এ কনসার্ট শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই ছিলো না, বরং বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও আধুনিক ব্যান্ড সংগীতের এক অনন্য মিলনমেলা। গ্রামীণ ঐতিহ্য থেকে আধুনিক রক সংগীত, সবই এক মঞ্চে এসে মিশেছে। ত্রিপুরা, খাসিয়া, মারমা, চাকমা, গারোসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও উজ্জ্বল করেছে।

দর্শকদের উচ্ছ্বাস

রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শকরা উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যান্ডশো উপভোগ করেন। তরুণ দর্শকদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের মানুষ এ আয়োজনে শামিল হন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠ দর্শকদের উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে।

চৈত্রসংক্রান্তি কনসার্ট বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য ও বৈচিত্র্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে এ আয়োজন শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শিল্পীদের মিলনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ উদ্যোগ ভবিষ্যতেও এমন বৈচিত্র্যময় আয়োজনের প্রত্যাশা জাগিয়েছে।

সবার দেশ/এমকেজে

সম্পর্কিত বিষয়: