Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান, নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২১:০০, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২১:১৭, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার: নাম ফলকের অদৃশ্যতা ও প্রশাসনিক শৈথিল্য

শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার: নাম ফলকের অদৃশ্যতা ও প্রশাসনিক শৈথিল্য
ছবি: সবার দেশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারের নাম গত ৭ জানুয়ারি ২০২৫-এ জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের নামে নতুনভাবে নামকরণ করা হয়।

বিএসএমএমইউ’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত আদেশে এটি ‘শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার’ হিসেবে ঘোষিত হয়। কিন্তু প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন নাম ফলক স্থাপনের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি, যা জনমনে হতাশা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

নামকরণের পর পূর্বের নাম ফলকটি একটি প্যানাসাইন পোস্টার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, যা শহীদ আবু সাঈদের নামে ছিলো। কিন্তু প্রাকৃতিক বাতাসে পোস্টারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছিঁড়ে যায় এবং একপর্যায়ে পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়। বর্তমানে ভবনটি নাম ফলকবিহীন অবস্থায় রয়েছে, শুধু পূর্বের ফলকের কাঠামোটি দৃশ্যমান। ফার্মগেট-শাহবাগ রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারীদের চোখে এ শূন্যতা প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে, এবং তারা প্রশ্ন তুলছেন—একটি নাম ফলক স্থাপনের জন্য কেন এতো সময় লাগছে?

এ বিলম্বের পেছনে প্রশাসনিক শৈথিল্য, অবহেলা, বা পরোক্ষ রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগ উঠছে। অনেকে মনে করছেন, পূর্ববর্তী সরকারের সমর্থক কিছু আমলা এখনো প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়ে গেছেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজে বিলম্ব ঘটাচ্ছেন। সরকারি চাকরির জটিলতা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের ধীর গতির কারণে এ পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। যদিও নতুন সরকার গঠনের পর প্রশাসন পরিশোধনের প্রক্রিয়া চলছে, তবু এটি সময়সাপেক্ষ। তবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও উপদেষ্টাদের তদারকির ঘাটতিও এ বিলম্বের একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দুজন উপদেষ্টা রয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের নীরবতা বা পদক্ষেপের অভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শহীদ আবু সাঈদ, যিনি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন, তিনি গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ হিসেবে স্বীকৃত। তার নামে নামকরণ একটি প্রতীকী সম্মান, যা তরুণ প্রজন্মের ত্যাগের স্বীকৃতি। কিন্তু নাম ফলক স্থাপনে বিলম্ব এ সম্মানকে ম্লান করে দিচ্ছে।

প্রশাসনের শ্লথ গতি এবং আমলাদের অবহেলা দীর্ঘদিনের সমস্যা। সাধারণত ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকলে কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়, কিন্তু জনস্বার্থের কাজে প্রায়ই বিলম্ব ঘটে। এ ক্ষেত্রে একটি নাম ফলক স্থাপনের মতো সহজ কাজে চার মাসের বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদফতরের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে, তাদের নিয়মিত তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:

  • তদন্ত ও জবাবদিহিতা: সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিলম্বের কারণ চিহ্নিত করা এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
  • দ্রুত নামফলক স্থাপন: অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে শহীদ আবু সাঈদের নামে স্থায়ী নামফলক স্থাপনের ব্যবস্থা করা।
  • প্রশাসনিক সংস্কার: আমলাদের অবহেলা ও শৈথিল্য রোধে কঠোর শাস্তির বিধান এবং নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করা।
  • ছাত্র প্রতিনিধিদের ভূমিকা: উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্র প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া এবং কাজ ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগী হওয়া।

শহীদ আবু সাঈদের নামে নামকরণ শুধু একটি প্রশাসনিক কাজ নয়, এটি জাতির প্রতি তার ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গণমানুষের দাবি, অতি দ্রুত নাম ফলক স্থাপন করে এ শ্রদ্ধা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হোক। গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শ ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

সবার দেশ/কেএম