দুদকের মামলায় আদালতের আদেশ
তাজুল ইসলামের স্ত্রীর ৩০৪ একর জমি ক্রোক

সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের নামে বান্দরবানের লামা উপজেলায় ইজারা ও বায়না দলিলে থাকা ৩০৪.৫৯ একর জমি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট, ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করেন। দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ এ আবেদন করেন।
আদালতের আদেশে ফৌজিয়া ইসলামের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে:
- বান্দরবানের লামা উপজেলায় ৫৩টি দলিলে ৩০৪.৫৯ একর জমি।
- ঢাকার গুলশানে জমিসহ একটি ফ্ল্যাট।
- চট্টগ্রামের হালিশহরে চারতলা বাসার এক-তৃতীয়াংশ।
অস্থাবর সম্পদের তালিকায় রয়েছে:
- ১২টি ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৫ টাকা।
- ১৪টি প্রতিষ্ঠানে শেয়ারের মূল্য ৩ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ টাকা।
- মোট অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৭ হাজার ২১৫ টাকা।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৪ টাকার সম্পদ অর্জন ও দখলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, তার স্বামী মো. তাজুল ইসলাম অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ফৌজিয়ার নামে এ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। দুদক আরও জানায়, ফৌজিয়ার ১১টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার ২০৩ টাকা জমা এবং ১৩ কোটি ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৫ টাকা উত্তোলনসহ মোট ২৭ কোটি ১১ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৮ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে আয়ের উৎস আড়াল করা হয়েছে। এ অভিযোগে দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং পেনাল কোডের ১০৯ ধারায় ফৌজিয়া ও তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে।
দুদক জানায়, তদন্তের সময় ফৌজিয়ার ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থ হস্তান্তর বা বেহাত করার চেষ্টার তথ্য পাওয়া গেছে। এ কারণে এ সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল আদালত তাজুল ইসলামের নামে থাকা ঢাকা, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে ২৮.৬৩ বিঘা জমি, কুমিল্লায় দুটি বাণিজ্যিক স্পেস, একটি ফ্ল্যাট এবং একটি দোকান জব্দের আদেশ দেন। এছাড়া তার নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৫০টি ব্যাংক হিসাব ও শেয়ারে থাকা ২৮ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। তাজুলের বিরুদ্ধে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন, ৩৫টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মফিয় হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুদক সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত জোরদার করেছে। তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফৌজিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা এবং সম্পদ ক্রোকের আদেশ সে প্রক্রিয়ারই অংশ। দুদক সূত্রে জানা গেছে, তাজুল ও ফৌজিয়ার আয়কর নথি জব্দের জন্য গত ১০ মার্চ আদালতের নির্দেশ পাওয়া গেছে, যা তাদের সম্পদের উৎস নিয়ে আরও তথ্য প্রকাশ করতে পারে।
সবার দেশ/এমকেজে