Advertisement

সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ২ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৮:২৬, ২ জানুয়ারি ২০২৫

অভদ্র ‘ভদ্র’ 

প্রকল্পের নামে হাতিয়েছেন ১০৭ কোটি টাকা  

করোনাকালে ‘কোভিড পজেটিভ’ নিয়ে তিনি জালিয়াতির আশ্রয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব কাছাকাছি। যা থেকে শেখ হাসিনাও করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। ওই ঘটনার জেরে এসএস ভদ্রকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসরে।

প্রকল্পের নামে হাতিয়েছেন ১০৭ কোটি টাকা  
ফাইল ছবি

নাম তার সুধাংশু শেখর ভদ্র। ‘এসএস ভদ্র’নামেই সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক। নামে ‘ভদ্র’ হলেও কাজ-কর্মে ছিলেন উল্টোটি। যত ধরণের অভদ্রতা করা সম্ভব-সবই করেছেন তিনি। করোনাকালে ‘কোভিড পজেটিভ’ নিয়ে যিনি জালিয়াতির আশ্রয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব কাছাকাছি। যা থেকে শেখ হাসিনাও করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। ওই ঘটনার জেরে এসএস ভদ্রকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসরে। 

অবসরে যাওয়ার আগে লুটেপুটে ফোকলা করে গেছেন ডাক অধিদফতরকে। একের পর এক গ্রহণ করেন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় সরকারি কেনাকাটার নামে হাতিয়ে নেন শত শত কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু একটি প্রকল্প থেকেই তিনি আত্মসাত করেন ১০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে  প্রকল্পের নামে ৯২ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারি পরিচালক মো: তানজিল হাসান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। 

এজাহারে বলা হয়, সুধাংশু  শেখর ভদ্র ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর  থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত  ‘পোস্ট ই- সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’র প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল  থেকে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক ছিলেন।  দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে  ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের ৯১  কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৪৬৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। যা দ-বিধির ৪০৯/৪২০ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলার তদন্তকালে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া  গেলে তাদেরকেও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে-মর্মে উল্লেখ করা হয় এজাহারে। 

এটি ছিলো এসএস ভদ্রের বিরুদ্ধে দুদকের দ্বিতীয় মামলা। এর আগে একই প্রকল্প থেকে ১৫ কোটি আত্মসাতের অভিযোগে গতবছর ২০ আগস্ট  আরেকটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু আগাম জামিন থাকায় সে যাত্রায় আদালত থেকে ছাড়া পান তিনি। 

ডাক অধিদফতরের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ মহাপরিচালক ছিলেন এসএস ভদ্র। তার দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এ প্রতিবেদক। এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং দুদক পৃথক অনুসন্ধানে নামে। এসব অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা প্রমাণিত হয়। অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে এসএস ভদ্রের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের হয়। 

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডাক বিভাগের ব্যবহারের জন্য ২০ হাজারটি পওস মেশিন কেনেন এসএস ভদ্র। কাজে লাগেনি একটিও। সরকারি এ কেনাকাটায় লুট হয় অন্তত: ১শ’কোটি টাকা। কোনও ধরণের সার্ভার না কিনেই আত্মসাৎ করা হয় এ অর্থ। 

‘ই  সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প’র আওতায় ৪৮২টি উপজেলা ডাকঘরে এবং ৬৫টি  জেলা ডাক ঘরের জন্য একটি করে সার্ভার  কেনার কথা ছিলো। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৩০টির মতো সার্ভার  কেনার কথা। কিন্তু সার্ভার না কিনেই প্রকল্পের আওতায় ‘খরচ’ দেখানো হয়েছিলো ১১০  কোটি টাকা। এভাবে নয়-ছয় করে ৫শ’৪০  কোটি ৯৪ লাখ টাকা ‘নাই’ করে দেন এ ‘ভদ্র’। পতিত হাসিনা সরকারের লুটপাটতন্ত্রের অন্যতম সহযোগি ছিলেন ডাক অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র, সহকারি প্রকল্প পরিচালক  মোস্তাক আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা। 

সবার দেশ/এওয়াই