শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসইডিপি প্রকল্প
বই ক্রয়ে অপচয় শতকোটি টাকা
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের শাসনকাল জুড়ে ছিলো দুর্নীতির মহোৎসব। সরকারি কেনাকাটা সেখানে, সেখানেই ছিলো অবাধ লুটপাট। এ লুন্ঠন সংঘটিত হয়েছে মুজিব বন্দনার মধ্য দিয়ে। নতুন প্রজন্মের মনন-মগজে মুজিব পরিবার প্রতিষ্ঠাই ছিলো লক্ষ্য।
উদ্দেশ্য হাসিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিশু-কিশোরদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার নামে ফাদা হয় বই কেনার একাধিক প্রকল্প । যে প্রকল্পে কেনা হয় শুধু মুজিব-পরিবার, ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতীয় আধিপত্যবাদী বিস্তারে সহায়ক এবং আওয়ামী বুদ্ধিজীবী লেখক-প্রকাশকদের বই। ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)’ ছিলো এমনই একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সাল থেকে কেনা হয় শত শত কোটি টাকার বই। প্রকল্পের আওতায় ‘স্ট্রেন্দেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস’ শীর্ষক স্কিম ডকুমেন্ট অনুসারে ১৫ হাজার সেকেন্ডারি স্কুলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
সর্বশেষ গতবছর অন্ততঃ ২শ’ কোটি টাকার বই কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে হাইকোর্টের একটি আদেশ। তবুও আইনের ফাঁক-ফোঁকড় ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা তড়িঘড়ি করে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার বই কিনে ফেলে। সৃজনশীল প্রকাশকমহল প্রতিবাদে সোচ্চার হলে আরও ১শ’ কোটি টাকার বই ক্রয় চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে মুজিব-দর্শন ছড়িয়ে দিতে ‘পাঠাভ্যাস সৃষ্টির’ নামে শেখ হাসিনা ২০১০ সালে একটি ‘পাঠ অভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’ নেন। কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কর্মসূচির সহায়ক বিবেচনায় ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)’র আওতায় ‘স্ট্রেন্দেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস’ শীর্ষক স্কিম ডকুমেন্ট অনুসারে দেশের ১৫ হাজার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচিটি পরিচালনা করা হয়।
যে সব শর্তে বই কেনার কথা উল্লেখ করা হয়:
(ক) একজন লেখক বা একটি প্রকাশনা সংস্থা সর্বোচ্চ ৫টি বই প্রস্তাব করতে পারবে।
(খ) আগ্রহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই হালনাগাদ আয়কর সনদ, ট্রেডলাইসেন্স /প্রকাশনা লাইসেন্স থাকতে হবে। লেখকদের ক্ষেত্রে কেবল আয়কর সদন প্রযোজ্য হবে।
(গ) বইয়ের বিষয়, মান স্পেসিফিকেশন, গ্রহণযোগ্যতা ও অযোগ্যতা, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ক বিস্তারিত শর্তাবলী।
(ঘ) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যসমুহ বিজ্ঞপ্তির অংশ হিসেবে গণ্য হবে।
(ঙ) নির্বাচিত বইয়ের মূল্য বই তালিকাভুক্তির পর পৃথকভাবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হবে।
(চ) সংশ্লিষ্ট ঘোষিত শর্তাবলী পূরণই তালিকাভুক্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে না।
(ছ) কোনো নির্দিষ্ট বই তালিকাভুক্ত করা কিংবা না করার বিষয়ে কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এর আগে, ২০২১ সালের ২৭ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)’র আওতায় বই কেনার লক্ষ্যে প্রকাশকদের কাছ থেকে বইয়ের নমুনা আহবান করে। প্রকাশকরা নমুনা জমা দিলে বাছাই কমিটি এ থেকে ৯৬টি বইয়ের একটি তালিকা চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য ২০টি বই, ৭ম শ্রেণির জন্য ২০টি বই, ৮ম শ্রেণির জন ২০টি বই, ৯ম শ্রেণির জন্য ২০টি বই এবং ১০ম শ্রেণির জন্য ১৬টি বই ছিলো। কিন্তু এ তালিকা প্রণয়নে চূড়ান্তর রকম দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে মর্মে প্রকাশকদের মধ্য থেকেই অভিযোগ ওঠে।
সেসব বই বাছাইয়ের নীতিমালায় উল্লেখ ছিল, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো প্রকাশক কিংবা লেখকের বই বাছাই করা যাবে না। এমন শর্তের মধ্য দিয়ে মূলত: আওয়ামী বন্দনা,ভারতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের পথকে নিষ্কন্টক করা হয়। উল্লেখ্য আওয়ামী চিন্তা চেতনার বাইরে কোন মতামতকেই স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দেয়া ছিলো ফ্যাসিবাদ সরকারের বয়ান।
নামে-বেনামে এক প্রকাশকের একাধিক বই:
গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি প্রণীত তালিকায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ওসমান গনি মালিকানাধীন ‘আগামী প্রকাশনী’র ৪টি বই, ফরিদ আহমেদ মালিকানাধীন ‘সময় প্রকাশনী’ থেকে ৪টি বই, তারই সহযোগী প্রকাশনী ‘অধুনা’ থেকে ১টি বই, আফজাল হোসেন মালিকানাধীন ‘আনিন্দ্য প্রকাশনা’ থেকে ২টি বই, তারই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আদিত্য প্রকাশন’ থেকে ২টি বই, একেএম নাসির আহমেদ সেলিমের ‘কাকলি প্রকাশন’র ২টি বই, তারই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘প্রচলন’ থেকে ১টি, ‘আলোর ভূবন’ থেকে ১টি, তার ‘দিব্য প্রকাশনী’ থেকে ৩টি বই, ‘তা¤্রলিপি’ থেকে ২টি বই, ‘সিদ্দিকীয়া প্রকাশনী’র ২টি বই, ‘নওরোজ কিতাবিস্তান’ থেকে ২টি, ‘জাগৃতি’র ২টি তালিকায় স্থান পেয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সৃজনশীল বই ক্রয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এক প্রকাশকের একাধিক বই তালিকাভুক্তির পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। উল্লেখিত প্রকল্পের অর্থ মূল্যের পরিমাণ ১শ’ কোটি টাকার বেশি। যা পরবর্তীতে ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। অথচ প্রকল্পটিকে অরাজনৈতিক রাখা গেলে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দেশের প্রকাশনা জগতের জন্য মাইলফলক হতে পারতো।
দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আওয়ামী সিন্ডিকেটের মধ্যে বিলি-বণ্টন হয়ে যাওয়ায় সে সম্ভাবনা তিরোহিত হয়। হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী প্রকাশক গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়ে নামে- বেনামে মানহীন বই সরবরাহ করে। আত্মসাৎ করে অন্তত: এক শ’ কোটি টাকা। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে গুণগত মানহীন,আওয়ামী বন্দনা সম্বলিত তালিকাভুক্ত করায় মন্ত্রণালয়, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সে অভিযোগ ধামাচাপা দেয় দুদক।
ভারতীয়, বিদেশী বই:
ক্রয়যোগ্য বইয়ের মানদন্ড নিরূপনে একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়। সে শর্ত অনুযায়ী বাছাই কমিটি কোনো বিদেশী লেখক-প্রকাশকের বই বাছাই করতে পারবে না। যাদের অফিস নেই, শো-রুম বা স্টল নেই; এমন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের বই কেনা যাবে না। বিদেশী ইংরেজী বই কেনা যাবে না। ‘মহানমুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী’ কোনো লেখকের বই নির্বাচন করা যাবে না-মর্মে বাকশালী সিদ্ধান্ত ছিলো কথিত নীতিমালায়। বাছাই কমিটি কথিত নীতিমালাও অগ্রাহ্য করে। ‘নওরোজ কিতাবিস্তান’ থেকে প্রকাশিত ভারতের সত্যজিৎ রায়ের ২টি বই তালিকাভুক্ত করে। অথচ সত্যজিৎ রায় লেখক হিসেবে ‘চিরায়ত’র সংজ্ঞায় পড়েন না।
এ কমিটি ‘রিপ ভ্যান টুইংকেল’, ‘অ্যারাইস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘আরকাউন্ড দ্য ওয়ার ইন এইট ডে’র মতো বহু বিদেশী বই সরাসরি তালিকাভুক্ত করে। তার সঙ্গে কোনো বাংলা অনুবাদ নেই। কিন্তু কমিটি সরাসরি ইংরেজী বই তালিকাভুক্ত করে। যে তিনটি ইংরেজী বই তালিকায় রাখা হয়েছিলো সেগুলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কোনো নামই ছিলো না। বইয়ের আকার, পৃষ্ঠা সংখ্যা, কয় রঙের মূদ্রণ, বিষয়বস্তু, বইয়ের বিক্রয় মূল্য-এসব তথ্যও উল্লেখ ছিলো না।
নীতিমালার একটি ছক তৈরি করে দেয়া হয়। সেটি লঙ্ঘন করে বাছাই করা হয় বিদেশি বইগুলো।
নীতিমালার ১৭ নম্বরে উল্লেখ ছিলো, মহা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কোনো লেখকের গ্রন্থ নির্বাচন করা হবে না। এর মধ্য দিয়ে মূলতঃ আওয়ামী ঘরানার প্রকাশকদের বই সরবরাহের সুযোগ নিরঙ্কুশ করা হয়।
কথিত ওই নীতিমালার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে তখন চেয়ারম্যান করে একটি ‘বই বাছাই কমিটি’ করে। নিয়মানুসারে প্রকাশকগণ ৫টি করে বই জমা দেয়া শুরু করেন। কিন্তু অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ইন্তেকালের পর তার স্থলাভিষিক্তি হন বাংলা একাডেমির তৎকালিন মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, বাংলা একাডেমির তৎকালিন সভাপতি, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ঢাবি’র ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবু মো: দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, ঢাবি’র অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক, ঢাবি’র চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন ও ঢাবি’র ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরমা জাকারিয়া চৌধুরী।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এসইডিপি’র আওতায় বই বাছাইয়ে একটি কমিটি করা হলেও এটি ছিলো অনেকটাই অলঙ্কারিক। বই বাছাকর্মে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। অধিকাংশ বইয়ের তালিকা আসে তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপুমনির কাছ থেকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সচিবের দফতর এবং দীপুমনি বাছাই কমিটির ওপর প্রভাব সৃষ্টি করেন। ফলে পুরো প্রকল্পের সুবিধাটি ভোগ করেন প্রকাশনার জগতের আওয়ামী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের কর্তা ব্যক্তি ছিলেন হাসিনার অতি অনুগত সাবেক সিনিয়র সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ওরফে কামাল চৌধুরী। আওয়ামী বাছাই কমিটির বিবেচনায় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোনো বই স্থান পায়নি।
বাছাইা কমিটির প্রধান ছিলেন হাসিনার উচ্ছিষ্টভোগী, বাংলা একাডেমির তৎকালিন মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং সেলিনা হোসেন। বাছাই করা হয় তাদের বইও। বিতর্কিত লেখক হুমুয়ান আজাদের ‘লাল-নীল দীপাবলী’ (আগামী প্রকাশনী) ছিলো বাছাইয়ে। অথচ এ বই বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসের বই হিসেবে অনার্স-মাস্টার্সে পাঠ্য। এটি কোনোভাবে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ছিলো না। দ্বিজেন শর্মার লেখা ‘জীবনের শেষ নেই’ বইটিও বাস্তবে শিশুতোষ বই ছিলো না। এ থেকে স্পষ্ট যে, বই বাছাই কমিটির সদস্যগণ ছিলেন সিন্ডিকেট দ্বারা প্রভাবিত।
এসইডিপি’র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কমিটির তৎকালিন প্রধান বাংলা একাডেমির মহা-পরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদাকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু ফোনে তিনি সাড়া দেননি।
কাজ হয়নি অভিযোগে:
এসইডিপি প্রকল্পে একটি সিন্ডিকেট নামে-বেনামে একাধিক বই কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা’র সভাপতি মো: আরিফ হোসেন ছোটন ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন সচিব মো: আবু বকর ছিদ্দীককে বিষয়টি অবহিত করেন। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, করোনাকালিন মহামারী সময় বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে, ঠিক এমনই একটা সময়ে এ প্রকল্প প্রকাশনা শিল্পে যৎসামান্য আলোর রেখা দেখা দিয়েছিলো। এটি প্রকাশকদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় এ যে, এ প্রকল্পে মূলধারার প্রকাশক বাদ দিয়ে নামে বেনামে অসংখ্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই তালিকাভুক্ত করা হয়। এভাবে তালিকাভুক্ত হলে প্রকৃত ও মূলধারার প্রকাশকরা তাদের বহুদিনের প্রত্যাশিত প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হবেন। আবেদনে বেনামে জমাকৃত বই তালিকা থেকে বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সে অনুরোধে কাজ হয়নি। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
প্রকাশকদের পক্ষে ‘ত্রয়ী প্রকাশনী’র মালিক শাহ আল মামুন বাদী হয়ে একটি রিট (নং-৪৮৯০/২০২৩) করেন। ‘জোনাকী প্রকাশনী’র মালিক মঞ্জুর হোসেন, ‘মনন প্রকাশনী’র মালিক মাধব চন্দ্র দাস, ‘বটেশ্বর বর্ণ প্রকাশনী’র মালিক কায়সার-ই-আলম প্রধানও এ রিটের বাদী। বিবাদী করা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং স্কিম ডিরেক্টরকে। শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেন। কিন্তু রুল উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি দেয়া হয় বই কেনার কার্যাদেশ। বাছাই কমিটির তালিকায় সামান্য এদিক-সেদিক করে কেনা হয় ১শ’ কোটি টাকার বই। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দীর্ঘ আওয়ামী ফ্যাসিজমের উৎখাত হওয়ার কারণে শত কোটি টাকার বই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। ফলে সেগুলো কোনো কাজেই আসে নি।
‘বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক ও ‘রিদম প্রকাশনা সংস্থা’র মালিক মো: গফুর হোসেন বলেন, আদালতের রায় অগ্রাহ্য করে তড়িঘড়ি করে এসইডিপি’র আওতায় যেসব বই কেনা হয়েছে সে বইগুলো কোনো কাজে আসেনি। সেগুলো স্কুলে বিতরণ করা হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ বইয়ের বিষয়বস্তুই এখন অপ্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, সৃজনশীল বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো রাজনীতি থাকা উচিৎ নয়।
গফুর হোসেন আরও বলেন, বিগত সরকার এটিকে রাজনীতিকায়ন করেছে। দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি ও রাজনীতি না থাকলে প্রকল্পটি পাঠক-লেখক-প্রকাশকদের জন্য একটি অসাধারণ উদ্যোগ ছিলো। সরকারি অর্থে বইকেনার আওয়ামী সিন্ডিকেটের কয়েকজন সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ভোল পাল্টে চেষ্টা চালাচ্ছেন পুনরায় লুটপাটের। আমরা সিন্ডিকেট ভাঙার লড়াইয়ে আছি। অতীতে যারা দুর্নীতি করে সম্ভাবনাময় প্রকল্পটি নষ্ট করেছেন তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।