Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ২২ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০৩:১৭, ২২ এপ্রিল ২০২৫

‘বাংলাদেশি নই’ বলা নতুন বিতর্কে শেখ হাসিনার ভাগ্নি

ব্রিটিশ টিউলিপের বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্ট

ব্রিটিশ টিউলিপের বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্ট
ফাইল ছবি

‘আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি’ — ২০১৭ সালে লন্ডনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে এমন জবাব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। তবে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পালাবদলের পর তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব, এনআইডি, পাসপোর্ট ও কর রেকর্ড (টিআইএন) এখন দেশের আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরকেন্দ্রে।

বাংলাদেশি পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় টিউলিপ 

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) যেখানে তার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে-

  • ঠিকানা: বাসা/হোল্ডিং: ৫৪, রোড/গ্রাম: ৫, এলাকা: ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ডাকঘর: নিউ মার্কেট-১২০৫, সিটি কর্পোরেশন: ঢাকা - যা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন ‘সুধা সদন’-এর ঠিকানা।
  • নাম: টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (TULIP RIZWANA SIDDIQ), পিতা: শফিক আহমেদ সিদ্দিক, মাতা: রেহানা সিদ্দিক , জন্ম তারিখ: ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২, রক্তের গ্রুপ: B (+) পজিটিভ।  
  • NID নম্বর: ‘5066XXXXXXXXX8’ (পূর্ণ নম্বর তদন্ত প্রতিবেদনে সংরক্ষিত), ইস্যু তারিখ: ৩ জানুয়ারি ২০১১।

ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে ভোটার নম্বরসহ

  • ভোটার তালিকাভুক্ত এলাকা: ঢাকা মহানগর  
  • ভোটার নম্বর: ‘2613XXXXXXXXX9’  
  • হালনাগাদ তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর কাছে রয়েছে তার কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) ও আয়কর রিটার্ন জমার নথি

  • TIN (কর শনাক্তকরণ নম্বর): দুদকের তদন্তে সংরক্ষিত।
  • স্ট্যাটাস: করদাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত।
  • আয়কর রিটার্ন জমাদান: একাধিক অর্থবছরে নিয়মিতভাবে রিটার্ন দাখিল করেছেন।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জন্মস্থান

তথ্যানুসারে,  ২০০১ সালে লন্ডনে অবস্থান করেই তিনি প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন, যেখানে জন্মস্থান ও পাসপোর্ট প্রদানের স্থান: লন্ডন, ইউকে।  

  • ১ম পাসপোর্ট: নাম: টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। 
  • পাসপোর্ট নম্বর: ‘QXXXXXX99’, ইস্যু তারিখ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০১, মেয়াদ শেষ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬।
  • জন্মস্থান ও ইস্যু স্থান: লন্ডন, যুক্তরাজ্য, উচ্চতা: ৫ ফুট, পেশা:শিক্ষার্থী।
  • পিতা-মাতার নাম: যথাক্রমে শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও রেহানা সিদ্দিক।

২০১১ সালে বাংলাদেশে বসে পাসপোর্ট নবায়ন করেন, স্থান: আগারগাঁও, ঢাকা।  

নবায়নকৃত পাসপোর্ট:  

  • পাসপোর্ট নম্বর:‘AAXXXXXX4’, ইস্যু তারিখ: ৩ জানুয়ারি ২০১১, মেয়াদ শেষ:** ২ জানুয়ারি ২০১৬।  
  • টাইপ: অর্ডিনারি (ORDINARY), ইস্যু স্থান:** আগারগাঁও, ঢাকা। 
  • ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট পারসন: নাম: তারেক আহমেদ সিদ্দিক, পদ: শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা
  • ঠিকানা: সুধা সদন, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

দুদকের মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও লন্ডনের প্রতিক্রিয়া
  
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্তে নামে দুদক।  

প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত সম্প্রতি ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, যার তালিকায় আছেন শেখ হাসিনা, টিউলিপ ও আরও অনেকে।

লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন:  

  • বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা মিডিয়ায় ট্রায়াল চালিয়েছে। আমি এ রাজনৈতিক হয়রানি ও অপপ্রচারে গুরুত্ব দিতে চাই না। আমি কোনো ভুল করিনি।
  • তবে তার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো জবাব আসেনি, বলেও দাবি করেন তিনি।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও নাগরিকত্বের দ্বৈততা
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিউলিপের মতো একজন বিদেশি এমপি যদি বাংলাদেশের ভোটার হন, এনআইডি ও পাসপোর্টধারী হন, তাহলে তা শুধু রাজনীতির নয়, আইনগত দ্বৈততা এবং নাগরিকত্বের স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে।

এদিকে ব্রিটিশ এমপি হিসেবে টিউলিপের পদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিক মহল, যদি বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণগুলি আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিফলিত হয়।

সবার দেশ/কেএম