প্রধান উপদেষ্টার নিকট ৪ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পেশ
সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নতুন বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
সংস্কার প্রতিবেদন থেকে হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার। তার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চারটি সংস্কার কমিশনের হস্তান্তর করেন কমিশনের সদস্যরা। এ সময় তাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
যে চারটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ- উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ সংস্কার প্রতিবেদনের মাধ্যমে যেটা গঠন করা হবে বা যার উদ্দেশ্য হলো এটা থেকে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। যা হবে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার। এটা মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরা যাবে না।
এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটাকে শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতায় বেধে রাখা হবে রা। বহু ধরনের কমিটি হয়, রিপোর্ট প্রকাশ হয়, আনুষ্ঠানিকতা হয়; কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর চাইতে অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের এ ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই এ কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।
একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেখান থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি, আজকের এ অনুষ্ঠান সে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিবেদন নয়। আজ যে প্রতিবেদনগুলো আমরা হাতে নিলাম, অবশ্যই এটা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চর্চা। কেউ সেটা অস্বীকার করবে না।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সেটার কাঠামো তৈরির কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে এখনও, সে স্বপ্নের রূপরেখাগুলো তুলে ধরতে হবে। এটা শেষ নয়, একটা অধ্যায়ের শুরু হলো। স্বপ্ন এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী তার যে যাত্রা, সেটা শুরু হলো। এর বড় একটি অংশ এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হবে যে, আমরা কী করতে চাই। এটার মাধ্যমে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা শুরু করব। সবার মন এতে সায় দিচ্ছে কিনা; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না-এ আলোচনার রসদ আপনারা তৈরি করে দিয়েছেন।
পওধান উপদেষ্টা বলেন, এর মধ্য দিয়ে সবার মতৈক্য হবে, আর কিছু অংশের সবাই একমত হবেন। তা না হলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম? আমরা নিজেরা স্বপ্ন দেখলাম, আর সে স্বপ্নে মানুষের অংশ নেই সেটা তো হতে পারে না। আমরা সে স্বপ্নের কতটুকু এখানে নিয়ে এসেছি, সেটার জন্যেই এ আলোচনা। এটা বাইরে থেকের চাপানোর কোনো জিনিস নয়, ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস।
আগামীতে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে আলোচনা হবে, সেখানে কমিশনের সদস্যরাই নেতৃত্বে দেবেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। তার মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, যার উদ্দেশ্য হলো এটা গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। ওই যে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার, সেরকম চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। এ চার্টার থেকে যাবে, ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনও দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সাইনআপ করবে।
উপদেষ্টা বলেন, এটা বাংলাদেশি, বাঙালি জাতির একটা সনদ, যে সনদ আমরা বুকে নিয়ে অগ্রসর হবো। যত দ্রুত পারি, যত বেশি পরিমাণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারি করতে থাকবো। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এটাও হবে এই চার্টারের ভিত্তিতে। সেটাও যেন ঐকমত্যের সরকার হয়- (পরবর্তী সরকারও যেন বলে) যে, চার্টারকে আমরা ধরে রেখেছি। যত কিছুই হোক, এটা যেন হাত থেকে ছেড়ে না দেই। তা না হলে এ স্বপ্নের যে কনটিনিউইটি সেটি থাকবে কী করে! আমরা সে স্বপ্নের কনটিনিউইটি চাই, বাস্তবায়ন চাই।
তিনি বলেন, নির্বাচনও এ চার্টারের একটা অংশ হবে, ঐকমত্যের নির্বাচন হবে। তা নাহলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন। এসময় সংশ্লিষ্ট কমিশনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
সবার দেশ/কেএম