২০০৯ সালে আ’লীগ ১৪৪ ধারা জারি করে স্থায়ী বন্ধ করে কোরআনের তাফসির
সাঈদীর ময়দানে ওয়াজ করবেন আজহারী
চকবাজার প্যারেডে দীর্ঘ ২৯ বছর একাধারে সেখানে তাফসির মাহফিলে বয়ান করে গেছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা প্রয়াত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এবারই প্রথম তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে তার অনুপস্থিতিতে।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার প্যারেড মাঠে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের তাফসিরুল কোরআন মাহফিল হতে যাচ্ছে। ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পাঁচ দিনব্যাপী মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান মুফাচ্ছির হিসেবে মাহফিলের শেষ দিন অংশ নেবেন জনপ্রিয় ইসলামি চিন্তাবিদ ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
চকবাজার প্যারেডে দীর্ঘ ২৯ বছর একাধারে সেখানে তাফসির মাহফিলে বয়ান করে গেছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা প্রয়াত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এবারই প্রথম তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে তার অনুপস্থিতিতে।
২০০৬ সালের ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্যারেড ময়দানে সর্বশেষ তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঐতিহাসিক এ তাফসির মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর পরের দুই বছর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ মাহফিলের অনুমতি দেয়নি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার তাফসির মাহফিল আয়োজনের চেষ্টা করে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ। ওই বছরের ২৯ মার্চ থেকে তাফসির মাহফিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু ওই দিন সরকারের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) প্যারেড ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপর থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় এ আয়োজন।
বিগত সরকারের আমলে নানা টানাপোড়েনে ছিল জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু হয় জেলেই।
তার অনুপস্থিতিতে এবারই প্রথম তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। জানা গেছে, সাঈদীর অনুপস্থিতিতে এবারের মাহফিলের মূল আকর্ষণ মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। তিনি এ মাহফিলের পঞ্চম ও শেষ দিনে তাফসির পেশ করবেন।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এবারের তাফসির মাহফিলের প্রস্তুতি কাজ আরও আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ উদ্দেশে তাফসির এন্তেজামিয়া কমিটি ও ১৯টি সাব-কমিটি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশা করছি মাহফিলে বিপুল শ্রোতার সমাবেশ ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনুভব করছি, সে তুলনায় মাঠটি যথেষ্ট নয়। তাই আমরা সমাবেশের সংকুলান ও শোনার সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
মিজানুর রহমানের বিষয়ে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, একসময় মাহফিলের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকতেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তিনি প্রয়াত হওয়ায় এবারের আকর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মিজানুর রহমান আজহারীকে। আজহারী সাহেব প্রখর মেধাবী তরুণ ইসলামি স্কলার। বাংলা ছাড়াও তিনি বহু ভাষায় দায়ী হিসেবে মাহফিলে আলোচনা করে থাকেন। মূলত মাহফিলের শেষ দিন তিনি তাফসির করবেন। উনার বয়ান নিশ্চয়ই মানুষের ভালো লাগবে।
প্যারেড মাঠের মূল প্যান্ডেলে এবার নারীদের প্যান্ডেল থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠের নিয়মশৃঙ্খলা সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবেন। সঙ্গে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাহফিলে আসা নারী শ্রোতাদের আসা-যাওয়া, বসা ও শোনার সহজ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে এবার মূল মাঠের দক্ষিণে মহসিন কলেজের মাঠ, কাজেম আলী হাইস্কুল ও গুলজার বেগম হাইস্কুলে এবং মূল মাঠের উত্তরে কিশলয় কমিউনিটি সেন্টার ও কাপাসগোলা কলেজে প্যান্ডেল থাকবে।
প্যারেড মাঠের চারদিকে দক্ষিণে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ মোড় ও জামালখান তথা চেরাগিপাহাড় মোড় পর্যন্ত, উত্তরে মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচলাইশ থানা মোড় পর্যন্ত, পূর্বে চকবাজার ধুনির পোল ও বাকলিয়া এক্সেস রোডের সুবিধাজনক অংশ পর্যন্ত এবং পশ্চিমে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল পরবর্তী সিজিএস স্কুল মোড় পর্যন্ত এলাকায় অবস্থিত মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলোর সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় যেসব শ্রোতা সমবেত হবেন, তাদের শোনার ব্যবস্থা থাকবে। যথাসম্ভব এলইডির ব্যবস্থা থাকবে।
সবার দেশ/এমকেজে