Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফেসবুকে কমেন্টের জের

সিলেটে শিবিরের হামলার শিকার জুলাই বিপ্লবের কর্মী রিয়াদ

সিলেটে শিবিরের হামলার শিকার জুলাই বিপ্লবের কর্মী রিয়াদ
ছবি: সংগৃহীত

কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকাশিত একটি নিউজে কমেন্ট করেছিলেন সিলেট এমসি কলেজ ইংরেজী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদ। সে ঘটনায় তার উপর হামলা করেছে শিবির। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে। 

শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত রিয়াদ ছিলেন জুলাই বিপ্লবের সক্রিয় কর্মী। এছাড়া আনজুমানে তালামীযে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল তিনি। আহত রিয়াদকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। মাথা, পিঠ ও ডান পায়ে কয়েক স্থানে জখম করা হয়েছে তার। এমনকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পায়ের রগ কাটারও চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান আহত রিয়াদ। 

একপর্যায়ে রিয়াদকে টেনে হিঁচড়ে রুমের বাইরে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারী শিবিরের নেতাকর্মীরা। এসময় নিয়ে যায় আহত রিয়াদ ও তার রুমমেট জুনেদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যায় তারা।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরাণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনির হোসেন বলেন, ঘটনাটি এখনেও তার নজরে আসেনি। কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে এখন বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১০১ নং কক্ষের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী। তার রুমমেট জুনেদ বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা দিতে যেয়ে রুমমেট জুনেদ বলেন, বুধবার দিবাগত মধ্যে রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দু'জন। এমন সময় দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পান তারা। দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলেন রিয়াদকে।

রিয়দকে তারা জিজ্ঞেস করেন, কুয়েটের ঘটনায় তুই শিবিরকে নিয়ে কী লিখেছিস। কোনো উত্তরের তোয়াক্কা না করেই তাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। রিয়াদের রুমমেট জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেয়া হয়। দরজা লাগিয়ে রড দিয়ে বেধড়ক পিঠাতে থাকেন। 

এক পর্যায়ে শিবিরের কর্মী আদনান বলেন, তুই পরে যে অপবাদ দিবি, আগেই সেটি করে নেই। এ বলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পায়ের রগ কাটার চেষ্টা করে। রুমের বাইরে থাকা জুনেদের আর্তচিৎকারের ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা জড়ো হন। শিবিরের নেতাকর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদকে রুমের বাইরে টেনে বের করে ফেলে চলে যায়। তাকে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। 

শিবির সেক্রেটারি মুন্না বলেন, সেও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো, পুলিশে দেয়ার দরকার নেই। মার যা হওয়ার হইছে যথেষ্ট। আর যাতে ছাত্রাবাসে উঠতে না পারে। ছাত্রাবাস ত্যাগের সময় ১০১ নং রুমে তালা দিয়ে রিয়াদ ও জুনেদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিয়াদের অবস্থা গুরুতর। মাথা, পিঠ ও ডান পায়ে কয়েক স্থানে জখম হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মিজানুর রহমান রিয়াদ জুলাই বিপ্লবের সক্রীয় কর্মী। কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি নিউজের কমেন্টে লিখেন, কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম। দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাটিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিলো। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতা কর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন তাহলে এ ত্যাগের মূল্য কী।

এদিকে ঘটনাটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন মাসিক পরওয়ানা সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী। সেখানে তিনি লিখেছেন সিলেট এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের অতর্কিত হামলায় তালামীযে ইসলামিয়ার সক্রিয় কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ গুরুতর আহত হয়েছেন, তাকে দেখতে গিয়ে যা শুনলাম ও দেখলাম তার সারাংশ হচ্ছে, ফেইসবুকে কমেন্টের জেরে তার উপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে গুপ্ত সংগঠনের সন্ত্রাসী দখলদারীর সমালোচনা করায় এ ন্যাক্কারজনক হামলা, জুনিয়র ছাত্ররা অশালীন কথাবার্তা বলে হামলে পড়ে তার ওপর। ঘটনার আকস্মিকতা ও অপমানবোধে বাকরুদ্ধ সে। রড দিয়ে মাথা সহ সরা শরীরে আঘাত করেও ন্যূনতম দয়া না দেখিয়ে রক্তাক্ত মৃতপ্রায় মানুষটিকে টেনে হিঁচড়ে ফেলে যায়। এমনকি সহপাঠীরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকসা নিয়ে এলে সেটিও ফিরিয়ে দেয়। হাসপাতালে যেতে বাঁধা দেয়। রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মৃতপ্রায় করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল ফোন মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এমনকি তাকে উদ্ধার করতে আসা এক সহপাঠীর মানিব্যাগের টাকা রেখে ব্যাগ ফেরত দেয়।

হামলা ঘটনার ব্যাপারে সিলেট মহানগর শিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নাঈম হোসাইন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজ খরব নিচ্ছি। কারন গভীর থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা আমাদের দায়িত্ব। ফ্যাসিস্টের দোসররা জুলাই বিপ্লবকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। তারা সে ভাবে কাজ করছে ও সে ভাষায় কথাও বলছে। আমরা সর্তকতা অবলম্ব করছি ঘটনার নৈপথ্যতা উদ্ঘাটনে। আমাদের কর্মীরা যদি এ হামলার সাথে জড়িত হয়, তাহলে সংগঠন তাদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। তবে প্রকৃত ঘটনার উদ্ঘটানের পর এ নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে আমাদের অবস্থান পরিস্কার করবো।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (মিডিয়া) বলেন, হামলার ঘটনাটি নিয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি আমরা। কেনো ফেসবুকে কমেন্ট করা হলো, সে উদ্দেশ্যও দেখতে হচ্ছে আমাদের। হামলার কারন, কেনো হামলা করা হলো, কারা জড়িত , সে বিষয়টিও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি আমরা। এখনেও কোন পক্ষের লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে না আসলেও বিষয়টি জুলাই বিপ্লবের চেতনার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কাজে নেমেছে পুলিশ। বর্তমানে অফিসার দায়িত্ব নিয়ে কাজে নেমেছে, আমাদের লক্ষ্য বিস্তারিত অনুসন্ধান। তিনি অরও বলেন, আহত রিয়াদের বাড়ী ওসমানীনগরে। তবে তার অবস্থা গুরুতর নয়।

সবার দেশ/কেএম