বাবর ১৭ বছর পর যা বললেন নেত্রকোনায়

নেত্রকোনায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে জেলা বিএনপি এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৭ সালে গ্রেফতার পর তিনি নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন, যার মধ্যে দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছিলো। তবে সাম্প্রতিক রায়ের ফলে ধাপে ধাপে তিনি মুক্তি পান এবং সবশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়ও খালাস পান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তিনি নিজ জেলায় ফেরেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, লুৎফুজ্জামান বাবর গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই নেত্রকোনায় আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। অপেক্ষা ছিলো তাকে নির্বাচনী এলাকায় বরণ করে নেয়ার। গতকাল সে প্রতীক্ষার অবসান হয় বলে জানান তারা।
সকাল থেকে জনপ্রিয় এ নেতাকে বরণ করতে তার নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা মোক্তারপাড়া মাঠে মিলিত হন। লাখো জনতার উপস্থিতিতে বিশাল মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়, অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা উপভোগ করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় সাত মিনিট বক্তব্য দেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি। কিন্তু একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কারাগারে রাখা হয়েছিলো। আল্লাহ আপনাদের দোয়া কবুল করে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন। দেশের জনগণের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আমি কোনো কাজ করিনি। জনগণের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমি জীবন দিতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আমার নেতা তারেক রহমান ও নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে আমাকে চাপ দিয়েছিলো। কিন্তু আমি এসব পরোয়া করিনি, শুধু আল্লাহকে ডেকেছি। সত্যের জয় হয়েছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। আমি দলীয় নেতা-কর্মী, ভাই-বোনদের বলছি— কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবেন না। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্য আমি বর্তমান সরকারকে অনুরোধ জানাই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার যাতে আসতে পারে, সে জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকুন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন দেশ গড়ে তুলবো। নির্বাচনে যদি আমরা জয়ী হই, তবে আমার নিজ জেলা নেত্রকোনায় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন জেলার অসংখ্য মানুষকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিয়েছেন। কে কোন দল করত বা কে কোন গ্রুপের ছিলো, তা তিনি কখনও আমলে নেননি। তাই সবাই তাকে পছন্দ করেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও দূরদর্শী মানবিক এ নেতাকে দেখতে হাজারো মানুষ এখানে এসেছেন। তিনি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। আমরা তাকে গণসংবর্ধনা দিয়ে ধন্য হয়েছি।
অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আরিফা জেসমিন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের তালুকদার, যুগ্ম আহ্বায়ক এস.এম. মনিরুজ্জামান দুদু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম. বজলুল কাদের সুজা প্রমুখ।
সবার দেশ/এমকেজে