মেঘনায় বালুখেকোদের হামলায় প্রাণ নিয়ে ফিরলেন নৌপুলিশ ইনচার্জ

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও শক্তিশালী এ চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সর্বশেষ, রবিবার (২ মার্চ) গভীর রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে বালুখেকোদের হামলার মুখে পড়েন চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আজমগীর হোসাইন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত তাকে নদী ছেড়ে ঘাটে ফিরে আসতে হয়।
নৌপুলিশ সূত্র জানায়, রাত ২টা ৩০ মিনিট থেকে অভিযান পরিচালনা করতে নদীতে অবস্থান নেন ইনচার্জ আজমগীর হোসাইন ও তার টিম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, একটি চক্র নিষিদ্ধ স্থান (রামপ্রসাদের চর) থেকে বালু উত্তোলন করছে। ভোর ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদের চর থেকে নলচর এলাকা পেরিয়ে একটি বালুবাহী বাল্কহেড মেঘনা ব্রিজের দিকে আসতে থাকে। নৌপুলিশ সেটি আটকানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়।
এরপরই বালুখেকোরা বাল্কহেড আটকের সংবাদ পেয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ চালায়। পুলিশ সদস্যদের অবস্থান টের পেয়ে চক্রের মূল হোতা রবি ও খলিল তাদের সহযোগীদের খবর দেন। দ্রুত নলচর এলাকা থেকে দুইটি স্পিডবোট, ট্রলার এবং রায়পুর থেকে তিনটি ট্রলার নিয়ে বালুখেকোরা পুলিশের দিকে চতুর দিক থেকে ধেয়ে আসে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নৌপুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে অভিযান ব্যর্থ করা।
সোর্সের মাধ্যমে হামলার বিষয়টি আগেভাগেই জানতে পেরে ইনচার্জ আজমগীর হোসাইন দ্রুত সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসেন। পরে ঘাটে ফিরে তিনি জানতে পারেন, বালুখেকোরা নদীতে তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে।
এ ঘটনায় শঙ্কিত নৌপুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নদীতে এখন বাল্কহেড ধরা ও অভিযান চালানো আমার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের হামলার শিকার হতে পারি।
মেঘনা উপজেলা বিএনপি মহিলা দলের সভাপতি ও নলচর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবা ইসলাম মিলি বলেন, মেঘনায় বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালালেও প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে এ চক্র বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে রামপ্রসাদের চর এলাকার প্রায় ১০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে তীরবর্তী এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে, নদীর স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
নৌপুলিশের ওপর এ হামলার ঘটনায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা না হলে মেঘনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।
সবার দেশ/কেএম