হেফাজত নেতার বাড়িতে হামলা, অভিযোগে বিএনপির দিকে

মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, চাঁদার দাবি, সুপারকে মারধর—এর জেরে এবার হেফাজতে ইসলামের নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা।
ঘটনাস্থল নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়ন, যেখানে বিএনপি ইউনিয়ন সভাপতি ও স্কুলকর্মচারী আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়া–এর বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধে জড়িয়েছিলেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ ও সুপার আবদুল খালেক খান। অভিযোগ অনুযায়ী, আবুল কালাম এ কমিটির সভাপতি হতে চাচ্ছিলেন। যখন তা হয়নি, তখন চাঁদা দাবিসহ সুপারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তিনি।
খোদ সুপার জানান, আমি বারবার বলেছি কমিটির বিষয়ে আমার হাত নেই, তবুও আবুল কালাম চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সে আমার রুমে ঢুকে আমাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেয় এবং মারধর করে।
তিনি এ নিয়ে থানায়, ইউএনও বরাবর ও সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার স্থানীয়রা মাদ্রাসা চত্বরে মানববন্ধন আয়োজন করে। সেখানে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের নেতা ও ইমাম আনিসুর রহমান।
কিন্তু এ বক্তব্যই হয় কাল। পরিবারের অভিযোগ, সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা আবুল কালাম ও তার ছেলে সমর্থকদের নিয়ে আনিসুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে এবং তাকে গুরুতর মারধর করে।
রক্তাক্ত অবস্থায় আনিসুরকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন হাটখলা বাজারে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেও পুলিশি হয়রানি ছিলো, কিন্তু আলেমের বাড়িতে হামলার সাহস কেউ দেখায়নি। আজ বিএনপি নেতা নিজ হাতে হামলা করছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।
অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি মারধর করিনি, বরং আনিসুর নিজেই নিজের বাড়ির জিনিসপত্র কুপিয়ে নাটক সাজিয়েছে আমাকে ফাঁসাতে।
এদিকে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক জানিয়েছেন," সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, সুপার ও হেফাজত নেতার ওপর হামলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় নেতৃত্ব বনাম রাজনৈতিক কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। একদিকে চাঁদার অভিযোগ, মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, অন্যদিকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা—এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, হেফাজতকে পাশে চায় যারা, তারা কি নিজেরাই হেফাজত নেতাদের ওপর হামলায় লিপ্ত?
সবার দেশ/এমকেজে