Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

ব্যানার নিয়ে বিভ্রান্তি থেকে বিশৃঙ্খলা

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যুবদলের হামলা, ইউএনও লাঞ্ছিত 

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যুবদলের হামলা, ইউএনও লাঞ্ছিত 
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনের একটি অনুষ্ঠানে হামলা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবদলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে আটপাড়া উপজেলা মুক্তমঞ্চে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা থাকার ভুল তথ্যের জেরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়।

উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছিলো। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’-এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিলো। এ সময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন ওরফে কাইয়ুম, কামাল হোসেন তালুকদারসহ স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে এসে ইউএনওকে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন।

ইউএনও রুয়েল সাংমা কারণ জানতে চাইলে নেতারা দাবি করেন, মঞ্চের ব্যানারে ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা আছে। এ নিয়ে বিতর্কের জেরে মোদাচ্ছের হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেন এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ইউএনওসহ কর্মকর্তারা বাধা দিতে গেলে তাদের ধাক্কা দেয়া হয়। একজন নেতা উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, আমি কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকেসহ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে। উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে আখ্যায়িত করা হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

অভিযোগের জবাবে যুবদল নেতা নূর ফরিদ খান জানান, তারা ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা দেখে মঞ্চে গিয়েছিলেন। তবে পরে প্রশাসন নিশ্চিত করে যে ব্যানারে এমন কোনো লেখা ছিলো না। তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। লাঞ্ছনার অভিযোগ মিথ্যা। পরে জানা যায়, ফেসবুকে পোস্ট করা ওই ব্যানারটি ১৪৩০ সালের একটি পুরোনো ছবি ছিলো।

আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, ঘটনাটি কাম্য নয়। দলীয়ভাবে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, ইউএনওকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনা স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বর্ষবরণের উৎসবমুখর পরিবেশে এমন বিশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ভুল তথ্যের জেরে সৃষ্ট এ ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।

নেত্রকোনার আটপাড়ায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যুবদল নেতাদের হামলা ও ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা শুধু সাংস্কৃতিক আয়োজনকে পণ্ড করেনি, বরং স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভুল তথ্যের জেরে এ ঘটনা ঘটলেও, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ও সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

সবার দেশ/এমকেজে