দলটির অন্ধকারে রাজনৈতিক তৎপরতা শরীয়তপুরেও
রাতের ভোটের আ’লীগের রাতের মিছিল

শরীয়তপুরে রাতের অন্ধকারে মশাল হাতে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, যা গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলায় তাদের প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি।
শনিবার (২০ এপ্রিল ২০২৫) রাত নয়টার দিকে সদর উপজেলার জয়নগর এলাকায় এ ঝটিকা মশালমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলের একটি ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে শতাধিক মুখোশধারী ব্যক্তি মশাল হাতে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ভিডিওটি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয়েছে।
মিছিলের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সারা দেশে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, যার মূল লক্ষ্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। শরীয়তপুরের এ মশালমিছিল সে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ। তিনি জানান, আগামীতে জেলায় নিয়মিতভাবে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আরও কর্মসূচি পালিত হবে। এ তৎপরতা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠে ফিরে আসার কৌশল এবং সংগঠন শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
জনমনে প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকে এটিকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রূপে ফিরে আসার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর জনমনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও এমন প্রকাশ্য কর্মসূচি রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ মিছিল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং দেশি-বিদেশি কিছু শক্তির মদদের কারণে সম্ভব হয়েছে, যা আগামী দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
পুলিশের অবস্থান
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান জানান, পুলিশ মিছিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী এবং নেতৃত্বদানকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পুলিশের এ বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলগুলো প্রায়শই প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটছে।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
শরীয়তপুরের এই মিছিল আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী পুনরুত্থানের কৌশলের একটি অংশ। গত এক সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় অন্তত চারটি ঝটিকা মিছিল করেছে দলটি, যার মধ্যে উত্তরার মিছিল উল্লেখযোগ্য। এ কর্মসূচিগুলোর পেছনে প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী সমর্থক, ভারতের মতো বিদেশি শক্তির সমর্থন এবং কিছু রাজনৈতিক দলের নেপথ্য সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে। আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সমর্থনে ‘নব্য আওয়ামী লীগ’ গঠনের পরিকল্পনা চলছে, যেখানে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর তথাকথিত আদর্শের ভিত্তিতে দলটিকে পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ
শরীয়তপুরের মশালমিছিল আওয়ামী লীগের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, দলটিকে নিষিদ্ধ না করলে এবং তাদের অপকর্মের মূলহোতাদের বিচার না হলে, আগামী নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ পুরোনো ফ্যাসিস্ট রূপে ফিরে আসতে পারে।
শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের রাতের মশালমিছিল কেবল একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, বরং দলটির জাতীয় পর্যায়ে পুনরুত্থানের একটি সংকেত। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, দেশি-বিদেশি শক্তির মদদ এবং রাজনৈতিক সমঝোতার কারণে দলটি আবারও মাঠে সক্রিয় হচ্ছে। সময় থাকতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং তাদের অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা না হলে, জুলাই আন্দোলনের অর্জন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি দেশ আবারও অশান্তির মুখে পড়তে পারে। শরীয়তপুরের এ মিছিল সে আশঙ্কাকে আরও গভীর করেছে।
সবার দেশ/কেএম