ভোলায় পরিবহন শ্রমিকদের হাতাহাতি, সব রুটে চলাচল বন্ধ

ভোলার চরফ্যাশনে যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে বাস শ্রমিক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার জেরে ভোলা জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে। ফলে রোববার (২৭ এপ্রিল ২০২৫) সন্ধ্যা থেকে ভোলা-চরফ্যাশনসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চরফ্যাশন বাজারে যাত্রী তোলা নিয়ে বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এটি দ্রুত হাতাহাতি ও মারধরে রূপ নেয়। ঘটনায় উভয় পক্ষের ৩-৪ জন আহত হন, যার মধ্যে একজন অটোরিকশা চালক মো. ইমনের মাথায় আঘাত লাগে। বাস শ্রমিকরা দাবি করেন, সিএনজি চালকরা তাদের ওপর প্রথমে হামলা করে। এর প্রতিবাদে বাস শ্রমিকরা ৯টি সিএনজি অটোরিকশা আটক করে এবং ভোলার ৫টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস বা সিএনজি ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে ভোলা-চরফ্যাশন (ভায়া দক্ষিণ আইচা), চরফ্যাশন-দক্ষিণ আইচা, ভোলা-তজুমদ্দিন, ভোলা-ইলিশা, ভোলা-দৌলতখান, ভোলা-বাবুরহাট, এবং ভোলা-আঞ্জুরহাট রুট। যাত্রীরা টার্মিনালে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। অনেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন, কেউ কেউ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
দাবি ও অভিযোগ:
- বাস শ্রমিক ইউনিয়ন: ইউনিয়নের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান জানান, চরফ্যাশনে অন্যান্যা পরিবহনের ড্রাইভার সজিব ও সুপারভাইজার তানজিলের ওপর সিএনজি চালকরা হামলা করেছে। তারা হামলাকারীদের বিচার ও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (সিএনজি) চলাচল বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে। তাদের দাবি, সিএনজি চালকদের অদক্ষতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
- সিএনজি মালিক সমিতি: সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, হাতাহাতিতে সিএনজি শ্রমিকরাও আহত হয়েছেন। তবে তারা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি। তারা অভিযোগ করেন, বাস শ্রমিকরা প্রায়ই যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এবং তাদের ওপর জুলুম করে।
ধর্মঘটের পর বাস শ্রমিকরা ভোলা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
টার্মিনালের ডিপো কর্মকর্তা অসীম দত্ত জানান, বাস শ্রমিকরা হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাস চালাবে না বলে জানিয়েছে। ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেই বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।
যাত্রীরা জানান, বাস ও সিএনজি বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনে ছোট যানবাহনে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থ উভয়ের অপচয় ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ যানবাহন না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ভোলায় বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। গত ২৯ জানুয়ারি ২০২৫-এ বাসস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে ধারালো অস্ত্র ও ইটপাটকেল ব্যবহৃত হয়। এ ঘটনাগুলো যাত্রী তোলা ও মহাসড়কে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে।
বাস শ্রমিকদের ধর্মঘট ও সিএনজি চলাচল বন্ধের ফলে ভোলার পরিবহন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাস শ্রমিক ইউনিয়ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকলেও, দ্রুত সমাধান না হলে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
সবার দেশ/কেএম