অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলার রায়
জি কে শামীমের সাড়ে ৫ বছরের সাজা

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আলোচিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে পাঁচ বছর ৬ মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অর্থদণ্ড না দিলে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া, আদালত তার অবৈধভাবে অর্জিত ২৯৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর, দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। দুদকের তদন্তে উঠে আসে, শামীম ও তার পরিবার অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে বলা হয়, শামীম এবং তার মা একাধিক অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যা বৈধ কোনো আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর আদালত এ মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়।
বৃহস্পতিবারের রায়ে, আদালত শামীমকে ৫ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনুবর্তী শাস্তি হিসেবে দেয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড না দিলে, শামীমকে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। শামীমের ২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা একটি বিশাল আর্থিক ক্ষতির প্রতিফলন।
এ মামলায় শামীমের মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। আদালত জানিয়েছেন, আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অবৈধ সম্পদ অর্জন প্রমাণিত হয়নি, তাই তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।
দুদক এ রায়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, যার মাধ্যমে অবৈধ উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি দেশের আইন-ব্যবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা, যা ভবিষ্যতে এমন ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।
জি কে শামীম ছিলেন ঢাকা শহরের এক আলোচিত ঠিকাদার। তার নামে বহু অভিযোগ ছিলো যে, তিনি সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করতেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহার করতেন। তার শ্বাসরুদ্ধকর জীবন ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের নানা কৌশল প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তবে, এ রায়ের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে এক বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
এ রায় দেশের দুর্নীতিবিরোধী নীতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হতে পারে। বিশেষ করে, যদি অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এমন ধরনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তাহলে এটি দেশের আইনি সিস্টেমের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বৃদ্ধি করবে।
এ রায় দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে এবং এর ফলে আরও অনেক মানুষ মনে করছেন, দেশের আইনি ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কঠোর অবস্থান নেবে।
সবার দেশ/কেএম