Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ২০ এপ্রিল ২০২৫

শিশু ফাইয়াজ মামলায় আসিফ নজরুলের ক্ষোভ

শিশু ফাইয়াজ মামলায় আসিফ নজরুলের ক্ষোভ
ফাইল ছবি

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জুলাই ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের করা ‘পুলিশ হত্যা মামলায়’ ১৭ বছর বয়সী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের মামলা প্রত্যাহার না হওয়ার বিষয়ে তার ক্ষেভ প্রকাশ করেছেন। 

রোববার (২০ এপ্রিল ২০২৫) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘৫০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।

আসিফ নজরুলের মূল বক্তব্য

১. মামলা প্রত্যাহারের এখতিয়ার:  

আসিফ নজরুল জানান, তদন্তাধীন মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার এখতিয়ার কেবল পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। চার্জশিট জমা দেয়ার পরই আইন মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকে। ফাইয়াজের মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে থাকায় এটি সম্পূর্ণ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। তিনি বলেন, আমাদের যতই সদিচ্ছা থাক, একটি মামলা চার্জশিট পর্যায়ে আসার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার সুযোগ নেই।

২. ১৬৪ ধারার জবানবন্দির প্রভাব:  

ফাইয়াজের মামলার ক্ষেত্রে দুই আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আসিফ নজরুল জানান, এ জবানবন্দি প্রত্যাহার না হলে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া বা নিষ্পত্তি করা অত্যন্ত কঠিন। তিনি বিশ্বাস করেন, পুলিশ অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে এ জবানবন্দি নিয়েছিলো। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এ সরকার এসেছে আট মাস হয়ে গেছে। ওনারা (জবানবন্দিদাতারা) এখনও সেটি প্রত্যাহার করে নেননি কেনো? এটা করলে তো শিশু ফাইয়াজকে কোর্টে যেতে হতো না।

৩. জুলাই আন্দোলনের মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ:  

দায়িত্ব নেয়ার পরপরই আসিফ নজরুল তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশপ্রধানের (আইজিপি) সঙ্গে বৈঠক করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ করেছিলেন। তিনি জানান, বেশিরভাগ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে, তবে হত্যা সংক্রান্ত কিছু মামলা, যার মধ্যে ফাইয়াজের মামলাও রয়েছে, এখনও বাকি আছে।

৪. ফাইয়াজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ:  

আসিফ নজরুল ফাইয়াজের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি তাকে প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে বলেছি। এ প্রক্রিয়ায় এগুলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

৫. আইনের শাসন ও প্রক্রিয়াগত সীমাবদ্ধতা:  

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজ করতে পারে না। আইন মন্ত্রণালয় কেবল পরামর্শ ও অনুরোধ করতে পারে, কিন্তু তদন্তাধীন মামলায় হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে এবং জবানবন্দিদাতারা তা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবেন।

প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

ফাইয়াজের মামলাটি জুলাই ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের করা একটি উল্লেখযোগ্য মামলা, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ মামলায় ফাইয়াজকে প্রধান আসামি করা হয়েছিলো। আন্দোলনকারীদের দাবি, এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা মামলা। একটি এক্স পোস্টে দাবি করা হয়, পুলিশ এ মামলা প্রত্যাহার করছে না, কারণ আসিফ নজরুল এখনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেননি, যদিও আসিফ নজরুলের বক্তব্যে এ দাবির বিপরীতে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এটি আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারের বাইরে।

আসিফ নজরুল জানুয়ারি ২০২৫-এ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তবে ফাইয়াজের মামলার মতো কিছু হত্যা সংক্রান্ত মামলা জটিলতার কারণে এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

ফাইয়াজের মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের মাধ্যমে নেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে এই মামলা চলছে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আসিফ নজরুলের বক্তব্যে তিনি এ নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করলেও, জবানবন্দি প্রত্যাহার না করার জন্য আসামিদের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন, যা কিছুটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সরকারের উচিত এ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

আসিফ নজরুল ফাইয়াজের মামলা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সীমাবদ্ধতা এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়েছেন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহার না হলে মামলা নিষ্পত্তি কঠিন। তবে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ফাইয়াজের মামলাটি জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক হয়রানির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে, এবং এর নিষ্পত্তি না হওয়া সরকারের প্রতিশ্রুত রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ার ওপর প্রশ্ন তুলছে। আগামী দিনে এ মামলার অগ্রগতি রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

সবার দেশ/কেএম