Advertisement

আবু ইউসুফ


প্রকাশিত: ০০:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

চব্বিশের আত্মত্যাগের উপহার হোক গণমুখী সরকার

চব্বিশের আত্মত্যাগের উপহার হোক গণমুখী সরকার
ছবি: সবার দেশ

যে কোনও দেশের সরকারের ভূমিকা জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তবে এটি নির্ভর করে সরকার কতটা জনবান্ধন এবং কতটা স্বচ্ছভাবে জনগণের দাবির প্রতি সংবেদনশীল। জনবান্ধন সরকার জনসাধারণের দাবি ও চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপরদিকে, ফ্যাসিস্ট সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে, নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় এবং মতপ্রকাশে  জনগণের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ করে। 

জনবান্ধন সরকার এমন এক ধরণের শাসনব্যবস্থা যেখানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য জনগণের চাহিদা পূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এ সরকার জনগণের মতামত, দাবি ও প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা নিয়মিতভাবে জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় এবং গণশুনানির আয়োজন করে। তারা নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত রাখে এবং প্রয়োজনে ভুল স্বীকার করে। এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃত্ববাদী, কঠোর এবং স্বৈরাচারী আচরণ প্রদর্শন করে। এ ধরনের সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য জনমত উপেক্ষা করা, জনগণের দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়া। তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এবং জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় এবং নাগরিকদের মধ্যে ভয় তৈরি করে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে জনবান্ধন ও ফ্যাসিস্ট শাসনের নমুনা দেখা গেছে। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে জনবান্ধন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রচেষ্টা দেখেছি। উদাহরণস্বরূপ, প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ, এবং নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগগুলো জনবান্ধন নীতির প্রতিফলন।

জনদাবির প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাও জনবান্ধন সরকারের আরেকটি বৈশিষ্ট। জানুয়ারির শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করেছিলো। সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং নানা পেশা ও শ্রেণির জনগণ থেকে এ সিদ্ধান্তের  বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা আসতে থাকে। সরকার ধৈর্য্য ধরে সেসব দাবি শুনেছেন এবং অতি আবশ্যক কিছু পন্য থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করেছেন। 

সরকার তো মানুষই পরিচালনা করে। পরিচালনার সময় ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কিছু ভুল হতেই পারে। কিন্তু জনগনের গঠনমূলক সমালোচনা বিবেচনা করে নিজেদের শুধরে নেয়াই গণমুখী সরকারের কাজ। ফ্যাসিস্ট সেখানে নিজেদের তো শোধরাবেই না, উল্টো দমননীতি চালাবে।

১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটি ভূখন্ড পেয়েছি। ২৪ এর আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি গণমুখী সরকার পাবো সে প্রত্যাশাই করি। 

সম্পাদক
২৪ জানুয়ারি ২০২৫