Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আবু ইউসুফ


প্রকাশিত: ০১:১৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০১:১৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রয়োজন রাজনৈতিক দল ও তুর্কিতরুণদের সুদৃঢ় ঐক্য

প্রয়োজন রাজনৈতিক দল ও তুর্কিতরুণদের সুদৃঢ় ঐক্য
ছবি: সবার দেশ

বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত, ষড়যন্ত্র ও বিভক্তির শিকার। বর্তমান সময়ে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো—বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অনৈক্য দৃশ্যমান, যা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের একটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যের গুরুত্ব এবং এর অভাবে কীভাবে স্বৈরাচার শক্তিশালী হয়, তা ইতিহাস বহুবার দেখিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিরোধী শিবিরের বিভক্তি ও এর সম্ভাব্য পরিণতি আমাদের আবার কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত করতে পারে।

পতিত আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে জোরজবরদস্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে বিরোধী মতের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, কারাবরণ, ভোট কারচুপি, বাকস্বাধীনতার দমন ইত্যাদি অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠছে আসছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলকে কার্যত নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছিলো। বিরোধী শিবিরে ঐক্যের অভাব আওয়ামী লীগকে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে।

বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে কৌশলগত ও আদর্শিক মতপার্থক্য দীর্ঘদিনের। যদিও আওয়ামী লীগের দমননীতি ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের লক্ষ্য এক, তবুও ঐক্যের অভাবে তারা শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছিলো প্রায় ষোল বছর।

এক সময় জামায়াত বিএনপির জোটসঙ্গী ছিলো, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপি প্রকাশ্যে জামায়াতের সাথে দূরত্ব বজায় রাখছে। এর প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক চাপ এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ। বিএনপি মনে করে, জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে থাকলে তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন কমতে পারে।

বিএনপি মূলত গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সরাতে চেয়েছিলো, কিন্তু দলটি কার্যকর কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াতও গোপনে সরকারবিরোধী আন্দোলন ছিলো, তবে তাদের আন্দোলনের ধরন ও লক্ষ্য ভিন্ন। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষুদ্র দলগুলোও স্বতন্ত্র কৌশল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলো, যা বিরোধী শিবিরকে একীভূত করতে পারেনি।

আওয়ামী বিরোধী ওই আন্দালন ফলপ্রসু না হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায় সঠিক নেতৃত্ব ও আস্থার সংকট এবং বিদেশি শক্তির আস্থা অর্জনে ব্যর্থতা।

বিএনপির নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন চাপে ছিলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসিত। জামায়াতের প্রধান নেতারাও অনেকেই গ্রেফতার বা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব সংকট এবং পরস্পরের প্রতি আস্থার অভাব ঐক্য গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাব বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত- সবাই বাংলাদেশ নিয়ে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিলো। বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটিও এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিলো।

বিরোধী দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের কারণে আওয়ামী লীগ সহজেই সরকার প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলো, কেননা একটি দুর্বল ও বিভক্ত বিরোধী শিবির তাদের জন্য বড় কোনও হুমকি তৈরি করতে পারেনি। সঙ্গত কারণেই দেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসনে গিয়েছে, বাকস্বাধীনতা উধাও হয়েছে, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও লুটপাট অবাধ হয়েছে, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা ছাড়িয়েছে, স্বাধীন মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের কণ্ঠরোধ হয়েছে, ভোটাধিকার যাদুঘরে বন্দী হয়েছে।

এমনি পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আবাবিল পাখির মতো হাজির হয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে। তাদের পেছনে সাহস করে দাঁড়িয়েছিলো তাদের অভিভাবক, বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী জোটের বাইরের সকল রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের জনতা। এমনি বাধভাঙ্গা আন্দোলনের জোয়ারে খুনি হাসিনা ৫ আগষ্ট দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।

জুলাই বিপ্লবের ৬ মাস যেতে না যেতেই বিএনপি জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক জোট ও ছাত্রদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সন্দেহ ও অবিশ্বাস, যার ফসল ঘরে তুলতে আওয়ামী লীগ মরিয়া। তার প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পেয়েছি।

একটা কথা সবার মনে রাখা দরকার, আওয়ামী লীগ কোনও রাজেতিক দল নয়। এটা মুজিববাদ নামে এক সন্ত্রাসী ধর্ম। যার আধ্মাতিক নেতা মরহুম মেখ মুজিব এবং এর বর্তমান খলিফা খুনি হাসিনা। তাদের রুখতে সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলোর উচিত একটি সমন্বিত রাষ্ট্র পরিচালনার রুপরেখা তৈরিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সহযোগিতা করা।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব আওয়ামী বিরোধী শক্তিকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ আরও কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে, যেখানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং গণতন্ত্র আবারও ভূলুন্ঠিত হবে।

জাতির এ ক্রান্তিকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন বিচক্ষণ ও চৌকস আন্তর্জাতিকমানের নেতা পেয়েছি আমরা। তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বহুদূর। 

বিএনপি ও জামায়াতের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে, তবে তাদের উচিত মুজিববাদরে বিরুদ্ধে কৌশলগত জোট গঠন করা। শুধু দলীয় স্বার্থ নয়, বরং দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়িয়ে পতিত হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করা। তাদের এ আন্দোলনে তরুন ছাত্ররা থাকতে পারে স্ট্রাইকারের ভূমিকায়, যেমনটা ছিলো জুলাই আন্দোলনে। রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন তরুণদের সম্পৃক্ততায় একটি শক্তিশালী ঐক্যই পারে এ জাতিকে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সোপানে পৌঁছে দিতে।

সম্পাদক
২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫