Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আবু ইউসুফ


প্রকাশিত: ০০:৪৪, ২১ মার্চ ২০২৫

রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনীতিবিদদের নীরবতা, কতটুকু নিরাপদ বাংলাদেশ!

বিস্ময়ের সঙ্গে দেশবাসী লক্ষ করেছেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে নীরব থেকেছে; যা তাদের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতা ও নতজানু অবস্থানের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের নীরবতা দেশের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতা নির্দেশ করে।

রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনীতিবিদদের নীরবতা, কতটুকু নিরাপদ বাংলাদেশ!
ছবি: সবার দেশ

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ সম্পর্কে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশে এর বিভিন্নরকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এমন অতি গুরুত্বপূর্ণি ইস্যুটি নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা মনে করেছিলো দেশের আপামর জনসাধারণ। কেননা, এতে আমাদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডার তুবড়িবাজি করা হয়েছে।

গ্যাবার্ডের বক্তব্যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ মন্তব্যের ভিত্তি ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

তুলসী গ্যাবার্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে, হাওয়াই থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু সদস্য ছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ইসকনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গ্যাবার্ডের পূর্ববর্তী বক্তব্যে তিনি বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে, তার সাম্প্রতিক মিথ্যা মন্তব্যের প্রেক্ষাপট ও ভিত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

গ্যাবার্ডের মন্তব্যের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। বিশ্বখ্যাত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্যাবার্ডের মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি এ মন্তব্যকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সম্মানের প্রতি আঘাত হিসেবে বিবেচনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সঠিক চিত্র উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। ড. ইউনূসের এ অবস্থান দেশের সম্মান রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেশবাসী লক্ষ করেছেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে নীরব থেকেছে; যা তাদের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতা ও নতজানু অবস্থানের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের নীরবতা দেশের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতা নির্দেশ করে। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে দেশের ভবিষ্যত কান্ডারীদের এহেন নীরবতায় জনগণ অবাক হয়েছেন।

তবে স্বস্তির কথা, ইতোমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নবনিযুক্ত মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিষয়ক প্রশ্নে বলেছেন, আমরা যেকোনও দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতার যেকোনও ঘটনার নিন্দা জানাই। এবং বাংলাদেশে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। এটাই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। অর্থাৎ তিনি গ্যাবার্ডের মন্তব্যে নাকচ করে দিয়েছেন।

গ্যাবার্ডের মন্তব্য ও এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের সঠিক চিত্র উপস্থাপনের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদ্যোগী হওয়া উচিত। পাশাপাশি, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো এবং সঠিক তথ্য পৌঁছানো জরুরি। সামাজিক মাধ্যমেও মিথ্যা তথ্য প্রচার রোধে প্রযুক্তিগত ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে দলীয় মতভেদ দূরে ঠেলে একযোগে কাজ করা এবং বিদেশি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অভিন্নকন্ঠে সোচ্চার হওয়া।

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ও এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকা এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা দেশের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হবো।

২১ মার্চ ২০২৫
সম্পাদক