মে মাসে নির্বাচন কমিশন গঠন
ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য অবশেষে টাইমলাইন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী মে মাসে নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রশাসনের অঙ্গীকার
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। প্রশাসন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য গত ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পদক্ষেপ ও অগ্রগতি সংবলিত একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও স্বচ্ছ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে গত ২৫ ডিসেম্বর ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ইতোমধ্যে ২২টি ছাত্র সংগঠনের কাছ থেকে সংশোধন প্রস্তাব সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ও উপাচার্যের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা হ্রাসের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
রোডম্যাপ ও পরিকল্পনা
ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী, মে মাসে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, যারা ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করবেন। এরপর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও প্রচারণার সময়সূচি প্রকাশ করা হবে। প্রশাসনের দাবি, সকল অংশীজনের সহযোগিতায় একটি মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করার একটি প্ল্যাটফর্ম। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এবং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।
পটভূমি ও প্রত্যাশা
ডাকসু ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। স্বাধীনতার পর থেকে ডাকসু নির্বাচন বেশ কয়েকবার অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৯০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছর এটি বন্ধ ছিলো। ২০১৯ সালে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নুরুল হক নুর ভিপি এবং গোলাম রাব্বানী জিএস নির্বাচিত হন। তবে, ওই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিলো।
গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, যার মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র ফেডারেশন অন্যতম, নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এবারের নির্বাচন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে এবং গণরুম ব্যবস্থার মতো সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও প্রশাসনের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে, তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ ও ছাত্রলীগের আধিপত্য নিয়ে সমালোচনা হয়েছিলো। এবার ছাত্র সংগঠনগুলো গঠনতন্ত্রে সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার দাবি তুলেছে। উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, সবার সহযোগিতায় আমরা একটি উৎসবমুখর নির্বাচন চাই। তবে, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সম্ভাব্য উত্তেজনা এ প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে।
শিক্ষার্থী নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে তারা হলগুলোতে অতিথি কক্ষের নির্যাতন, অতিরিক্ত ফি এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো সমাধানে কাজ করতে চান। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা নুজিয়া হাসিন রাশা গত ডিসেম্বরে বলেছিলেন, ডাকসু নির্বাচন ছাড়া ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ফিরবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘোষণা ক্যাম্পাসে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। নির্বাচন সফল হলে এটি বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
সবার দেশ/এমকেজে