Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২৫, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১২:২৬, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিজয়

কুয়েটের ভিসি, প্রো-ভিসির পদত্যাগ

কুয়েটের ভিসি, প্রো-ভিসির পদত্যাগ
ফাইল ছবি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এস কে শরীফুল আলম। বুধবার (২৩ এপ্রিল, ২০২৫) রাতে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বৃত্তি ও প্রকৌশল শাখার একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

পদত্যাগের পটভূমি

কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা দাবি করেন, ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে, যা উপাচার্য এবং প্রশাসন প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেন।

আন্দোলন তীব্র হওয়ার পর ১৬ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ২০ এপ্রিল তারা উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেন, অন্যথায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। ২৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন, যা ৫৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলে।

পদত্যাগের প্রক্রিয়া

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর তারা বুধবার রাতে পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগপত্রটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির দফতরে পাঠানো হবে, এবং তিনি গ্রহণ করলে তা কার্যকর হবে। 

কিছু সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এটি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নয়, বরং সরকারের চাপে তাদের অপসারণ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ, যেখানে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘাতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর প্রশাসন অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি এবং ১৩ এপ্রিল ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন রাজনৈতিক দলের কর্মী বলে দাবি করা হয়।

ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদও এ দাবিতে সোচ্চার ছিলো।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

পদত্যাগের খবরে শিক্ষার্থীরা ৫৮ ঘণ্টার অনশন ভাঙেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়। শিক্ষার্থীরা এটিকে তাদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবে দেখছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এ ঘটনাকে ‘ছাত্র-জনতার বিজয়’ হিসেবে উদযাপন করছেন, তবে অনেকে দাবি করেছেন, কুয়েটসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরপেক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি নজর দেয়া উচিত।

পরবর্তী পদক্ষেপ

পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা এখনও তাদের অন্য দাবি, যেমন হামলাকারীদের বিচার এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ঘটনা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে।

এ ঘটনা কুয়েটের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শন করেছে।

সবার দেশ/কেএম