টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিংয় ২০২৫
দেশসেরা বুয়েট, ড্যাফোডিল: ঢাবির অবনতি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (THE) ২৩ এপ্রিল ২০২৫-এ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৫ এবং এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৫ প্রকাশ করেছে। এ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিলেও, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার শীর্ষ ৩০০ বা বিশ্বের শীর্ষ ৮০০-এর মধ্যে স্থান পায়নি।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দেশসেরা হিসেবে শীর্ষে রয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-এর র্যাঙ্কিং উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়েছে।
এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ সালের এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩৫টি অঞ্চলের ৮৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। তবে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ৩০০-এর মধ্যে নেই। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে:
- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট): এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩০১-৩৫০ ব্র্যাকেটে অবস্থান। দেশের মধ্যে ১ম।
- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ): এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩০১-৩৫০ ব্র্যাকেটে অবস্থান। দেশের মধ্যে ২য়।
- গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩৫১-৪০০ ব্র্যাকেটে। দেশের মধ্যে ৩য়।
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩৫১-৪০০ ব্র্যাকেটে। দেশের মধ্যে ৪র্থ।
- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ): এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩৫১-৪০০ ব্র্যাকেটে। দেশের মধ্যে ৫ম।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৪০১-৫০০ ব্র্যাকেটে। দেশের মধ্যে ১০ম।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি গত বছর দেশের শীর্ষে থাকলেও এবার ১২তম অবস্থানে (এশিয়া র্যাঙ্কিং ৪০১-৫০০)।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান
টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৫-এ ১৭টি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ২,০০০-এর মধ্যে স্থান পেয়েছে। তবে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ৮০০-এর মধ্যে নেই। শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ৮০১-১,০০০ ব্র্যাকেটে অবস্থান করছে:
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমআরএইউ)
- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
- যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জাস্ট)
- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ)
বুয়েট, ঢাবি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইউ), এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ১,০০১-১,২০০ ব্র্যাকেটে রয়েছে।
ঢাবির অবনতি
গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ এক বা দুইয়ে অবস্থান করলেও ২০২৫ সালে এর অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়েছে। ২০২৩ সালে ঢাবি দেশের মধ্যে ১ম এবং ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিলো। কিন্তু ২০২৫ সালে এটি দেশের মধ্যে ১০ম স্থানে নেমে এসেছে। এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ঢাবি ৪০১-৫০০ ব্র্যাকেটে এবং বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১,০০১-১,২০০ ব্র্যাকেটে রয়েছে। এ অবনতির কারণ হিসেবে গবেষণার গুণগত মান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, আন্তর্জাতিকীকরণ, এবং প্রশাসনিক দক্ষতার ঘাটতি উল্লেখ করা হচ্ছে।
বুয়েটের শীর্ষস্থান
বুয়েট এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে ৩০১-৩৫০ ব্র্যাকেটে অবস্থান করে দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এটি ১,০০১-১,২০০ ব্র্যাকেটে রয়েছে। বুয়েটের এ অবস্থান প্রকৌশল শিক্ষা, গবেষণা, এবং শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে এর শক্তিশালী অবদানের প্রতিফলন। বুয়েটের উচ্চমানের গবেষণা সুবিধা, প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি প্রক্রিয়া, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এর অবস্থান ধরে রাখতে সহায়ক হয়েছে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান
- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে বুয়েটের সমান (৩০১-৩৫০) অবস্থান করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এটি ৮০১-১,০০০ ব্র্যাকেটে।
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় গত বছরের তুলনায় তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে, তবে ঢাবি এবং ব্র্যাকের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি গত বছর দেশের শীর্ষে থাকলেও এবার ১২তম স্থানে নেমে এসেছে, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত দেয়।
র্যাঙ্কিংয়ের মানদণ্ড
টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিং ১৩টি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটরের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, যা চারটি প্রধান ক্ষেত্রে বিভক্ত:
- শিক্ষাদান (৩০%): শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত।
- গবেষণা (৩০%): গবেষণার গুণগত মান, পরিমাণ, এবং প্রভাব।
- জ্ঞান হস্তান্তর (৩০%): শিল্প ও সমাজের সঙ্গে সহযোগিতা।
- আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি (১০%): আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এবং সহযোগিতা।
ঢাবির অবনতির কারণ ও প্রেক্ষাপট
ঢাবির র্যাঙ্কিংয়ে অবনতির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন:
- গবেষণার গুণগত মান: গবেষণায় বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সংখ্যা কম।
- শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত: ঢাবিতে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, যা শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করে।
- আন্তর্জাতিকীকরণ: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা কম, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সীমিত।
- প্রশাসনিক দক্ষতা: প্রশাসনিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
একটি এক্স পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাবি গত কয়েক বছরে শীর্ষ এক বা দুইয়ে থাকলেও এবার ১০ম স্থানে নেমে এসেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ
- ২০২৩: ঢাবি এবং এনএসইউ ৬০১-৮০০ ব্র্যাকেটে ছিলো, বুয়েট ১,২০১-১,৫০০ ব্র্যাকেটে।
- ২০২৪: ঢাবি, এনএসইউ, জাবি, এবং ব্র্যাক ৮০১-১,০০০ ব্র্যাকেটে ছিলো, বুয়েট ১,০০১-১,২০০ ব্র্যাকেটে।
- ২০২৫: বুয়েট এবং ডিআইইউ এশিয়া র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে গেছে, ঢাবি এবং ব্র্যাক পিছিয়েছে।
এ তুলনা থেকে দেখা যায়, বুয়েট এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (যেমন ডিআইইউ, এনএসইউ) তাদের অবস্থান উন্নত করছে, যেখানে ঢাবি ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
শিক্ষাবিদরা ঢাবির অবনতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করে গবেষণার জন্য অধিক তহবিল, শিক্ষক নিয়োগ, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। বুয়েটের সাফল্য প্রকৌশল শিক্ষায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে তুলে ধরলেও, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানে পৌঁছাতে আরও বিনিয়োগ ও সংস্কার প্রয়োজন।
এশিয়ার শীর্ষ তিন বিশ্ববিদ্যালয়—চীনের সিংহুয়া ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়—গবেষণা ও আন্তর্জাতিকীকরণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিং ২০২৫-এ বুয়েটের শীর্ষস্থান এবং ডিআইইউ-এর উত্থান বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। তবে, ঢাবির ১০ম স্থানে নেমে আসা এবং ব্র্যাকের অবনতি প্রশাসনিক ও একাডেমিক সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানে পৌঁছাতে গবেষণা, অবকাঠামো, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
সবার দেশ/কেএম