Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ২৯ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ০০:৪৯, ২৯ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রস্তাব

ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত ১৪৪, থাইল্যান্ডে চাপা পড়ে শতাধিক

ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত ১৪৪, থাইল্যান্ডে চাপা পড়ে শতাধিক
ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার (২৮ মার্চ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার ফলে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, ভারত, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যে কম্পন অনুভূত হয়েছে। এতে মিয়ানমারে ১৪৪ জন নিহত এবং ৭৩২ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন, যখন থাইল্যান্ডে ধ্বংসস্তূপের নিচে শতাধিক মানুষ আটকা পড়েছেন। এ ভূমিকম্পের ফলে উভয় দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষের জীবনবিনাশ ঘটেছে।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা: ১৪৪ জন নিহত

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিলো ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এবং এটি মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে ছিলো। ভূমিকম্পের প্রভাব এতটাই মারাত্মক ছিলো যে এতে মিয়ানমারে ১৪৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে নেপিডোতে ৯৬ জন, সাইগাইংয়ে ১৮ জন এবং মান্দালয়ে ৩০ জন রয়েছেন। এছাড়া, আহত ৭৩২ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তবে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো, মান্দালয়, সাইগাইংসহ ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং উদ্ধার তৎপরতা চলছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্পের কারণে বেশ কয়েকটি শহরে ভবন ধসে পড়েছে, পাশাপাশি সেতু এবং রেলপথও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষভাবে ইরাবতী নদীর ওপর আভা সেতু ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং তার পিলারগুলো পানির মধ্যে হেলে পড়েছে।

মান্দালয়ে ব্যাপক ধ্বংস: পাঁচতলা ভবন ধসে পড়েছে

মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় তারা দেখতে পান একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়েছে। শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা এখন রাস্তায় অবস্থান করছেন, কেউ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে সাহস করছেন না। মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘মিয়ানমার নাও’ জানায়, শহরের এক টাওয়ার পুরোপুরি ধসে গেছে এবং মান্দালয় প্রাসাদের দেয়ালের একাংশও ভেঙে পড়েছে।

থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভবন ধস: শতাধিক লোক আটকা

ভূমিকম্পের প্রভাব থাইল্যান্ডেও ব্যাপকভাবে পড়েছে। রাজধানী ব্যাংককের একটি নির্মাণাধীন ৩০ তলা ভবন ধসে পড়েছে, এবং এতে অন্তত ১১৭ জন আটকা পড়েছে। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের জন্য কাজ করছে। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেকের মধ্যে আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরের গভর্নর চাদচার্ট সিত্তিপান্ত জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর শহরের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং শহরের রাস্তা ও ভবনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া, ভূমিকম্পের পর আরও পরাঘাত (আফটার শক) আসতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ভূমিকম্পের তীব্রতা: দেশের বাইরে অনুভূতি

ভূমিকম্পটি শুধু মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডেই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অনুভূত হয়েছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষও ভূমিকম্পের কম্পন অনুভব করেছে। ভূমিকম্পের সময় ব্যাংকক শহরের হোটেলগুলোর সুইমিংপুল থেকে পানি উপচে পড়ছিলো এবং হোটেলগুলির ছাদে থাকা পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে বাইরে চলে আসেন।

মিয়ানমারের চলমান সংকট এবং ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন

মিয়ানমারের মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ এর মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক জো ফ্রিম্যান জানান, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে সেখানে ইতিমধ্যেই বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন ছিলো। ভূমিকম্পের পর সে সংকট আরও তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের ৩০ লাখের বেশি মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত এবং এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক জান্তা সরকার গঠনের পর দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, এবং এর ফলে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ ভূমিকম্পের কারণে দেশটির সংকট আরও গভীর হয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে।

উদ্ধার তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য

ভূমিকম্পের পর মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে উদ্ধার তৎপরতা চলছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য ও ত্রাণ কর্মসূচি শুরু করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ভূমিকম্পে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

এখন পর্যন্ত, মিয়ানমারে এবং থাইল্যান্ডে সরকার এবং উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ ও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও বিপর্যস্ত এবং আরও বড় সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।

সবার দেশ/কেএম