বিদ্যুতে স্বস্তি, আদানির একটি ইউনিট চালু

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কারিগরি ত্রুটির কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যা ৬:১৫টায় একটি ইউনিট পুনরায় চালু হয়েছে। এতে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, এ কেন্দ্র থেকে সাধারণত ১৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো। ৮ এপ্রিল প্রথম ইউনিট বন্ধ হওয়ার পরও দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত ছিলো। তবে শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হওয়ায় শনিবার সারা দিন কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়।
লোডশেডিং ও ঘাটতি মোকাবিলা
পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম ছিলো। দিনের সর্বোচ্চ চাহিদা বেলা ৩টায় ১৪,০০০ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়, যখন ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়। এর আগের দুই ঘণ্টায়ও ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করা হয়েছিলো। ঘাটতি মোকাবিলায় তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে এবং পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের জন্য বাড়তি গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় তেলচালিত কেন্দ্র থেকে বাড়তি উৎপাদন করে ঘাটতি মোকাবিলা করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় আদানির একটি ইউনিট চালু হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে স্বস্তি ফিরেছে। আমরা গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর জন্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে সমন্বয় করছি।
আদানির সঙ্গে চুক্তি ও বিতর্ক
আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। ২০১৭ সালে পিডিবির সঙ্গে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের এপ্রিলে এবং দ্বিতীয় ইউনিট জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। তবে কয়লার দাম নির্ধারণ, চুক্তির শর্তে ‘একতরফা’ সুবিধা এবং বকেয়া বিল নিয়ে পিডিবি ও আদানির মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
গত বছর আদানি একবার বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলেও চলতি বিল পরিশোধের পর সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, আদানির বকেয়া বর্তমানে ৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত একটি কমিটি বর্তমানে এই চুক্তি পর্যালোচনা করছে, যা কয়লার দাম ও চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
শিল্প ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব
আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় শনিবার বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ে, যা শিল্প উৎপাদন ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের মতো রফতানিমুখী খাত স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। একটি ইউনিট চালু হওয়ায় আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে দ্বিতীয় ইউনিট পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত পুরো স্বস্তি ফিরবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পিডিবি ও পিজিসিবি কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ইউনিট চালুর জন্য আদানি কাজ করছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সম্ভব হতে পারে। এদিকে, তেল ও গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দেশীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং জ্বালানির বৈচিত্র্যকরণ জরুরি।
আদানির একটি ইউনিট চালু হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক স্বস্তি ফিরলেও পুরোপুরি স্থিতিশীলতার জন্য দ্বিতীয় ইউনিটের দ্রুত চালু এবং চুক্তি-সংক্রান্ত বিতর্কের সমাধান প্রয়োজন।
সবার দেশ/এমকেজে