Advertisement

সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৩:০৫, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে সময় বেঁধে দিল আদানি

বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে সময় বেঁধে দিল আদানি
ছবি: সংগৃহীত

অসম চুক্তি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধে নতুন করে সময় বেঁধে দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। জুনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) চিঠি দিয়েছে তারা। এর আগে গত বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছিলো আদানি গ্রুপ। ওই সময় একটি ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ করেও চাপ দেয় তারা।  

রোববার (১৯ জানুয়ারি) পিডিবিকে পাঠানো চিঠিতে আদানি বলেছে, পিডিবির কাছে তাদের পাওনা ৮৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পিডিবিকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের বিল হিসেবে এ বকেয়া জমেছে পিডিবির কাছে। জুনের মধ্যে বিল পরিশোধ করা না হলে চুক্তি অনুসারে বিলম্ব ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হবে পিডিবির।

তবে পিডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, বিলে কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। চুক্তিতে উল্লেখিত সূত্র অনুসারে কয়লার দাম হিসাব করছে আদানি। আর কয়লার প্রকৃত দাম ধরে বিল হিসাব করছে পিডিবি। তাদের হিসাবে আদানির পাওনা ৭০ কোটি ডলারের মতো। পুরোনো বকেয়া জমলেও এখন নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হচ্ছে।

বকেয়া বিল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিঠি চালাচালি করছে আদানি ও পিডিবি। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি।

দিনে দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে এ কেন্দ্রটি। গত নভেম্বরে একটি ইউনিট বন্ধ করার পর বিল পরিশোধে সমঝোতা হয়। এরপর বন্ধ ইউনিট চালু করে আদানি। বিল পরিশোধে নতুন করে ঋণপত্র (এলসি) খোলে পিডিবি। এ ঋণপত্রের অধীনে এখন বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। শীতে চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি। সামনে গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হলে মার্চ থেকেই দুটি ইউনিট চালু হতে পারে।

পিডিবি সূত্র বলছে, ৯ জানুয়ারি আদানি ও পিডিবির প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর ভিত্তিতেই এখন আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে আদানি গ্রুপ।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ১৬ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত আদানির চিঠিতে। এতে বলা হয়েছে, বকেয়া শোধ না হওয়ায় তারল্যসংকটে ভুগছে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের বকেয়া বিল ৩০ জুনের মধ্যে শোধ করা হলে বিলম্ব ফি মওকুফ করার প্রস্তাব করেছে আদানি। পিডিবি ও আদানির স্বার্থে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধের অনুরোধ করেছে তারা।

এর আগে পিডিবির প্রতিশ্রুতি অনুসারে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঋণপত্র খুলে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর একটি চিঠি দেয় আদানি। এর মধ্যে তা করতে না পারায় ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, বকেয়া শোধের বিষয়টি আগেই মৌখিকভাবে জানিয়েছিলো আদানি। আনুষ্ঠানিক চিঠি রোববার পিডিবির কাছে এসেছে। এখন বকেয়া পরিশোধে করণীয় ঠিক করা হচ্ছে।

এদিকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দরপত্র ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। ইতোমধ্যে দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত ওই বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন চুক্তি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করেছে। আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতেও বেশ কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে কমিটি। তারা এটি নিয়ে কাজ করছে, চুক্তি সংশোধনের সুপারিশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

সবার দেশ/এমকেজে