Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

বাদ যাননি অপু বিশ্বাস, শাওন, জায়েদ খান, নুসরাত ফারিয়ারাও

হত্যাচেষ্টার মামলায় ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম

হত্যাচেষ্টার মামলায় ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম
ফাইল ছবি

ঢাকাই চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় তারকা অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, জায়েদ খান, নিপুণ আক্তার, মেহের আফরোজ শাওনসহ ১৭ জন অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকায় সংঘটিত একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনার সঙ্গে এ মামলা সম্পর্কিত। মামলাটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে দায়ের করেছেন এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন

মামলার বিবরণ ও অভিযোগ

মামলার নথি অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ভারতে পলাতক হাসিনাসহ তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করেছেন, যা আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হয়েছে। মামলার বাদী এনামুল হক দাবি করেছেন, আন্দোলনের সময় অন্য আসামিদের ছোড়া গুলিতে তিনি ডান পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।

আসামি তালিকায় থাকা ১৭ অভিনয়শিল্পীর মধ্যে রয়েছেন:

  • নুসরাত ফারিয়া
  • অপু বিশ্বাস
  • নিপুণ আক্তার
  • জায়েদ খান
  • সুবর্ণা মোস্তফা
  • রোকেয়া প্রাচী
  • আশনা হাবিব ভাবনা
  • সোহানা সাবা
  • মেহের আফরোজ শাওন
  • জ্যোতিকা জ্যোতি
  • সাইমন সাদিক
  • আজিজুল হাকিম এবং অন্যান্য।

মামলায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নুসরাত ফারিয়া আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, এ অভিযোগের পক্ষে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ মামলার নথিতে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন <<>> স্যুটিং নয়, বাস্তব: অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ

আইনি প্রক্রিয়া

ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলাটি আদালতের নির্দেশে তদন্তের জন্য গৃহীত হয়েছে এবং সব আইনি প্রক্রিয়া মেনে কার্যক্রম চলছে। তবে, এ পর্যায়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতি বা আসামিদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক

এ মামলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি করেছে। অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের অভিযোগ যদি সত্য হতো, তবে তদন্ত ছাড়াই প্রমাণ পাওয়া যেতো। তিনি এ মামলাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হুমকি হিসেবে দেখছেন।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির অংশ হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ অভিনেতা বলেন, শিল্পীদের রাজনৈতিক মত থাকতে পারে, কিন্তু হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগে তাদের জড়ানো একটি গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বহন করতে পারে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কোনো নতুন বিষয় নয়। অতীতে অনেক শিল্পী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, দলীয় প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বা সরকারি পদে নিয়োজিত ছিলেন। তবে, হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে এত সংখ্যক তারকার নাম জড়ানো নজিরবিহীন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মামলার একটি রাজনৈতিক মাত্রা রয়েছে, যা শিল্পীদের সামাজিক প্রভাব ও জনমত গঠনে তাদের ভূমিকার কারণে আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব কবির বলেন, এ ধরনের মামলায় আদালতের সতর্ক ও সংবেদনশীল ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তবে এটি আইনের অপব্যবহার ও হয়রানির নজির হতে পারে। অন্যদিকে, অভিযোগে সত্যতা থাকলে এটি শিল্পীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করবে।

সম্ভাব্য প্রভাব

এ মামলা কেবল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্র তারকারা সমাজে ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে বিবেচিত হন, এবং তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জনমনে বিভ্রান্তি ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, এটি শিল্পীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এ ঘটনা শিল্পীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে, যাতে তারা রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হন। একই সঙ্গে, এটি সমাজে সহিংসতা ও আইনের অপব্যবহার রোধে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের গুরুত্ব তুলে ধরে।

সবার দেশ/কেএম