গুজব ছড়াচ্ছেন ‘আলো আসবেই’ নেত্রী সোহানা সাবা
এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছেন ‘আলো আসবেই’ নামের সমালোচিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় থাকা অভিনেত্রী সোহানা সাবা। গুজব ও মিথ্যা সংবাদে ভরপুর তার ফেসবুক প্রোফাইল।
সোহানা সাবা ছিলেন কুখ্যাত ‘আলো আসবেই’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। যে গ্রুপের ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশটে দেখা যায় চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাস আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর গরম পানি ঢালার কথা বলেছেন।
‘আলো আসবেই’ গ্রুপের অ্যাডমিন সাবেক সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস, নায়ক রিয়াজ, অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। আর এতে যুক্ত ছিলেন শোবিজের অনেক তারকা। এ তালিকায় আছেন বিনাভোটের সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস, নায়ক রিয়াজ, জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, অভিনেত্রী সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, তানভীন সুইটি, হৃদি হক, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর উক্ত গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্য আত্মগোপনে গেলেও নিজের ফেসবুকে সক্রিয় চিত্র নায়িকা সোহানা সাবা। তার প্রোফাইল ফলো করছে দুই লাখের বেশি মানুষ। সাবার প্রোফাইলে দেখা যায়, সম্প্রতি ভারতের জয়পুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিচারক মনোনীত হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমের করা নিউজগুলো শেয়ার দিয়ে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ দিয়েছেন।
সোহানা সাবা গত ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবিতে দেখা যায় ক্যামেরার সামনে কথা বলছেন শেখ হাসিনা। ছবিতে লেখা, একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাতকার প্রদান করছেন বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও বৈধ প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় ভারতে অবস্থানরত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবিটি শেয়ার করে সোহানা সাবা লিখেছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কলম ভেঙে ফেলবো আজ!!
সাবার শেয়ার করা ছবিতে শেখ হাসিনার অনুরাগীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তবে ফ্যাক্ট চেক করে দেখা যায়, শেখ হাসিনার এ ছবিটি বহু পুরোনো। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেয়ার খবরটি আওয়ামী লীগের গুজব সেলের প্রচার করা একটি গুজব।
১৪ জানুয়ারি আরেকটি মিথ্যা তথ্য সম্বলিত পোস্ট করতে দেখা যায় সোহানা সাবাকে। সাবা লিখেছেন, অমর্ত্য সেনের সে বিখ্যাত কথাগুলো কেন জানি দুদিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছে আমাকে। খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় ক্রয়ক্ষমতার অভাবে। এদেশের সাধারণ মানুষের, বিশেষত গরিব শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা আর কতদিন থাকবে, কে জানে! লক্ষণ কিন্তু ভালো না।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করতে নোবেল জনী ড. অমর্ত্য সেনের যে বক্তব্য সাবা পোস্ট করেছেন তার অর্ধেক সত্য, বাকি অর্ধেক সোহানার মন গড়া প্রপাগাণ্ডা। ‘খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় ক্রয়ক্ষমতার অভাবে।’ এমন কোনো কথা অমর্ত্য সেন বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় ব্যবস্থাপনার অভাবে।’ ‘ব্যবস্থাপনা’ আর ‘ক্রয়ক্ষমতা’ শব্দ দুটির পার্থক্য বুঝতে না পারার কথা না এ অভিনেত্রীর। তিনি ইচ্ছা করেই মিথ্যা কোটেশন ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
এর একদিন আগে ১৩ জানুয়ারি সোর্সবিহীন একটি কার্ড পোস্ট করেন সাবা। যে কার্ডে পুরোনো একটি বাসের ছবি দিয়ে দাবি করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল থেকে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফেরা একমাত্র বাস ঢাকার রাস্তায়। ‘মাশআল্লাহ না বলে কেউ যাবেন না’ ক্যাপশন দিয়ে সাবা এ ছবি তার প্রোফাইলে পোস্ট করেছেন।
১৩ জানুয়ারি আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেছেন সাবা। সে ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তরায় ফুটপাত ফাঁকা করার অভিযানে ফুটপাতের একটি ভ্যান দোকান বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। ‘এটা সংস্কারের কাজ কী না?’ এমন প্রশ্ন করায় এক কমেন্টকারীকে সাবা জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। একটা গ্রুপে ভিডিও পেয়ে তিনি শেয়ার করেছেন।
শুধু সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডাই না, শহীদ আবু সাঈদের ঘটনাকে ‘ফালতু’ বলা পোস্টও শেয়ার করেছেন সাবা। ১০ জানুয়ারি মৌটুশি খান নামের এক আইডি থেকে পোস্ট করা হয় ‘আবু সাঈদ মার্কা ফালতু ঘটনা আমি আমার বাচ্চাকে পড়াবো না এতে আমার বাচ্চার রেজাল্ট খারাপ করলেও আমার বিন্দুমাত্র যায় আসবে না।
সাবা প্রশ্নবোধক দায়সারা (কিন্তু.. কেন?) ক্যাপশন লিখে পোস্টটা শেয়ার করেছেন ১১ জানুয়ারি।
এ অভিনেত্রী আওয়ামী প্রপাগান্ডার বড় আনুগত্য দেখিয়েছেন ৯ জানুয়ারি। জুলাই আন্দোলনে পাবনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাফিউল ইসলাম রাফি নামের একজন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং মারা যাওয়ার সময় সে তার বাবা নেই ও ছোটবোনকে দেখে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে ফেসবুকে দাবি করা হয়েছে।
এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং সাইট রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয় , পাবনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি মারা যায়নি বরং তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং বর্তমানে সুস্থ আছেন। রাফির মা নেই, তবে বাবা বেঁচে আছেন৷ ছোট বোনকে দেখে রাখার বিষয়েও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। রাফির মৃত্যুর খবর আসেনি কোনো জাতীয় গণমাধ্যমেও। এমন কি আওয়ামী প্রপাগান্ডার বিপরীতে রাফির বেঁচে থাকার খবর ডেইলি বাংলাদেশ এ ৯ আগস্টেই প্রকাশিত হয়। এছাড়া ৮ আগস্ট বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নেন রাফি। পাবনার স্থানীয় গণমাধ্যম পাবনাবার্তা টোয়েন্টিফোরেও সাক্ষঅৎকার দেন তিনি। উক্ত সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, রাফির বাবা আছেন কিন্তু মা নেই এবং তিনি ‘আমার বাবা নেই, ছোট একটা বোন আছে। কেউ দেখে রাইখেন’ শীর্ষক কোনো কথা বলেননি।
অথচ শহীদ রাফি ফিরে এসেছেন এমন একটা পোস্ট শেয়ার করে সাবা লিখেছেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়.. ফিরে আসা যায় ?! সব ইচ্ছা আল্লাহর।
বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এ অভিনেত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ছবি প্রকাশ করছেন। ভারতের জয়পুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিচারক হিসেবে মনোনীত হওয়ার খবর জানিয়েছেন নিজেই। গত বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে তথ্যটি জানান নিজেই। দীর্ঘ সে পোস্টে সোহানা সাবা লেখেন, ২০২৪-এর আগস্ট মাসে যখন আমাকে প্রতিবারের মতো প্রোপোজাল দেয়া হলো জুরি হতে, আমি এতটাই কাজহীন হয়েছিলাম এবং মন খারাপ করেছিলাম যে, চট করে এ প্রোপোজালটা এবার অ্যাক্সেপ্ট করে নিই। জি হ্যাঁ, আমি অফিশিয়াল জুরি অব জয়পুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ২০২৪। আমি এখন জয়পুরের পথে কলকাতা থেকে ফ্লাই করার জন্য অপেক্ষা করছি।
ফেসবুকে গুজব, মিথ্যা খবর ও প্রপাগান্ডার বিষয়ে মন্তব্য জানতে গত ১৫ জানুয়ারি বেশ কয়েকবার তার মোবাইল নাম্বারে কল দেয়া হয়। তিনি কল রিসিভ করেননি।
সবার দেশ/কেএম