Advertisement

সবার দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

চিকিৎসায় বাংলাদেশীদের গন্তব্য হয়ে উঠছে চীন!

চিকিৎসায় বাংলাদেশীদের গন্তব্য হয়ে উঠছে চীন!
ছবি: সংগৃহীত

বিগত সময়ে অনেক আমরা চিকিৎসা কিংবা ট্যুরিস্ট হিসেবে ভারতেই যেতাম। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারতীয় ভিসা এখন আমাদের জন্য দুর্লভ। গুরুতর অসুস্থতা বা আপৎকালীন পরিস্থিতির প্রমাণ দিতে পারলে ‘মেডিক্যাল ভিসা’পাচ্ছে। কিন্তু ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ পাচ্ছি না। 

স্বভাবতই কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কলকাতার বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর হিসাব বলছে, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে! প্রথমে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলি ভেবেছিল, ওই ধাক্কা ‘সাময়িক আশা ছিল, আবার ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া শুরু হবে। ফলে অক্ষুণ্ণ থাকবে রোগীর স্রোত। 

কিন্তু কাহিনিতে নতুন বাঁক এনেছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের চীন সফর। চীনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়েছেন তৌহিদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সূত্রের দাবি, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার অনুরোধে চীন সাড়াও দিয়েছে। কলকাতার  বিকল্প চিকিৎসা গন্তব্য’হিসেবে কুনমিং শহরকে পেশ করেছে চিন। এক বিবৃতিতে এমনই লেখা হয়েছে।

আনন্দবাজারের তথ্য অনুসারে, কলকাতার বদলে কি এ বার কুনমিংয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার বাজার? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর অবশ্য তা মনে হচ্ছে না। তার কথায়, বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য কোনও শহরই কলকাতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না। কলকাতা তাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক শহর বলেই বাংলাদেশিরা এখানে আসেন। 

অভিজিতের ব্যাখ্যা,ভাষা, খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি সব দিক দিয়ে কলকাতা বাংলাদেশিদের কাছে সুবিধাজনক। খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ইত্যাদি প্রায় হুবহু মেলে বলেই চিকিৎসার জন্য অনেক দিন থাকতে হলেও বাংলাদেশিদের কোনও অসুবিধা হয় না। বাংলাভাষী চিকিৎসকদের নিজের সমস্যা বোঝাতেও অসুবিধা হয় না। কুনমিংয়ে চিকিৎসা করাতে গেলে সে সব হবে কি?

আর এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগির মেনে নিচ্ছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে কলকাতায় স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছে। তার কথায়, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা আবার আগের জায়গায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু গৌতমও মনে করছেন না যে, চিনের কুনমিং শহর বাংলাদেশিদের কাছে কলকাতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে। তার কথায়, বাংলাদেশি রোগীরা চিনের কুনমিং সিটিতে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন, এটা বাস্তবসম্মত নয়। কলকাতায় যতটা সহজে সব হয়, কুনমিংয়ে সে সুবিধা মিলবে না। ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের বাংলাদেশি বাজার যে আবার ফিরে পাবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে কুনমিংয়ের চিকিৎসা করানোয় ‘অসুবিধা’ আরও আছে। ঢাকা থেকে কলকাতা সড়কপথ বা রেলপথে আসা যায় কয়েক ঘণ্টায়। কুনমিংয়ে সে ভাবে পৌঁছানো অসম্ভব। একমাত্র মাধ্যম আকাশপথ। তা-ও কোনও সরাসরি ফ্লাইট নেই। ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে কুনমিং পৌঁছনোর কয়েকটি বিমান রয়েছে। সে বিমানে টিকিট না মিললে প্রথমে ঢাকা থেকে চিনের পিকিং বিমানবন্দর বা গুয়াংঝো বিমানবন্দরে যেতে হবে। সেখানে ৭ ঘণ্টা বা ১০ ঘণ্টার বিরতির পরে আবার কুনমিংয়ের বিমান ধরতে হবে। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে সে যাত্রাপথ, বলা বাহুল্য, ‘সুবিধাজনক’ নয়। ফলে বাংলাদেশের সরকার নতুন স্বাস্থ্য পর্যটনস্থল খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু সে ভয়ে এখনও কম্পিত নয় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের হৃদয়।

সবার দেশ/এমকেজে