মুড সুইং কী? এর কারণসমূহ এবং ব্যবস্থাপনা
বর্তমান সময়ে অনেকেই মুড সুইংয়ের সম্যসার কথা বলে থাকেন। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যাটি খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়। মুড সুইং কী, কেন হয় এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা জানা থাকলে মুড সুইং সমস্যা নিয়ে আতংকিত না হয়ে সহজেই ম্যানেজ করে স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করা যায়। আসুন খুব সংক্ষেপে জেনে নিই মুড সুইং কী, কেন হয় এবং কীভাবে মুড সুইং সমস্যা ম্যানেজ করা যায়।
মুড সুইং একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থার হঠাৎ তীব্র পরিবর্তন বোঝায়। এটি এমন অনুভূতিগুলোকে জড়িত করতে পারে যা অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে সুখ থেকে দুঃখ, খিটখিটে মেজাজ বা ক্রোধে পরিবর্তিত হয়। হঠাৎ মন ভার হয়ে যাওয়া। হঠাৎ বিনা কারণে কান্না পাওয়া। কারো কথা সহ্য করতে না পারা। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা না করা।
সব ঠিকঠাক। তবুও কী যেন নেই। কী করবো, কোথায় যাবো এসব ভাবনায় মন বিচলিত হওয়া। একটা দম বন্ধ বন্ধ ভাব। কোনোকিছুতেই ভালো না লাগা। কারো সাধারণ কথায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত রিয়েক্ট করা। এ পরিবর্তনগুলো বাহ্যিক ঘটনা বা অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলোর প্রতিক্রিয়াতে স্বাভাবিকভাবেই ঘটতে পারে তবে এটি ঘন ঘন বা গুরুতর হয়ে উঠলে অন্তর্নিহিত মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সংকেতও দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
১. ডাঃ এডওয়ার্ড এ সেলবি (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট):
সেলবি নোট করেছেন যে মেজাজের পরিবর্তন মানসিক চাপ, ক্লান্তি বা হরমোনের পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যাইহোক, তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, যদি মেজাজের পরিবর্তন তীব্র হয় বা দৈনন্দিন জীবনে হস্তক্ষেপ করে, তবে সেগুলো বাইপোলার ডিসঅর্ডার, বিষণ্নতা বা ব্রডলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ব্যাধির মতো অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে।
২. ডাঃ গ্যাব্রিয়েল কার্লসন (সাইকিয়াট্রিস্ট):
কার্লসন ব্যাখ্যা করেন যে মেজাজের পরিবর্তন প্রায়ই মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণের সাথে যুক্ত থাকে, সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ সিস্টেমগুলোতে বাধাপ্রাপ্ত হলে দ্রুত মানসিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে, কখনও কখনও Attention-deficit/hyperactivity disorder (ADHD) বা বয়ঃসন্ধিকালে দেখা যায়।
৩. ডাঃ জিন টুয়েঞ্জ (মনোবিজ্ঞানী):
Twenge মুড সুইয়ের জন্য লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরগুলোর ভূমিকা হাইলাইট করে। যেমন ঘুমের অভাব, প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহার, বা খারাপ ডায়েট। তিনি মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করার জন্য এ কারণগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
সাধারণ কারণ:
• Biological Factors বা জৈবিক কারণ: বয়ঃসন্ধি, মাসিক, গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন।
• Mental Health Disorders বা মানসিক ব্যাধি: বাইপোলার ডিসঅর্ডার, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, বা ব্যক্তিত্বের ব্যাধি।
• Stress and Fatigue বা স্ট্রেস এবং ক্লান্তি: দীর্ঘস্থায়ী চাপ বা ক্লান্তি মানসিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
• Substance Use বা পদার্থের ব্যবহার: অ্যালকোহল, মাদক সেবন বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া মেজাজ নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে।
• Neurological Factors বা স্নায়বিক কারণ: মস্তিষ্কের রসায়নে ভারসাম্যহীনতা বা মৃগীরোগের মতো স্নায়বিক অবস্থা।
মুড সুইং ব্যবস্থাপনা:
মুড সুইং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের সুপারিশ করেন। যেমন:-
• থেরাপি: Cognitive-behavioral therapy (CBT) মানসিক নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে।
• ওষুধ: অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস বা মেজাজ স্থিতিশীলকারী Medication গুরুতর ক্ষেত্রে নির্ধারিত হতে পারে।
• লাইফ স্টাইল চেঞ্জ: নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, এবং পর্যাপ্ত ঘুম।
• Mindfulness Practices: মুড সুইং ম্যানেজ করার জন্য ধ্যান এবং শিথিলকরণ কৌশল চর্চা করা।
যদি মুড সুইং ক্রমাগত হয় বা জীবনযাত্রার মান নষ্ট করে, তাহলে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য একজন পেশাদার ও অভিজ্ঞ মানসিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।
লেখক: কবি ও লেখক