আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সংকট এবং করণীয়
আপোষহীন নেত্রী, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে। এ বিষয় বা তাকে নিয়ে নয়, আমাকে চিন্তিত করেছে কেন বাংলাদেশে তার চিকিৎসা আমরা করতে পারছি না? কেন আমরা বাংলাদেশে এরকম আধুনিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও!
বর্তমান পৃথিবীতে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধণ হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশী ডাক্তারদেরও দেশে, বিদেশে অনেক সুনাম রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী অনেক ডাক্তার সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আমরা নিজ দেশে কি করেছি?
আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমাকে আরও ভাবায় যে বাংলাদেশে ডাক্তাররা ভিনদেশে সুনাম কুড়াচ্ছেন, এদেশের সম্মান বয়ে আনছেন, অথচ আমাদের দেশে তারা সে সুযোগ পাচ্ছেন না কেনো? কিংবা আমাদের দেশে তাদের সেবার মানসিকতা থাকছে না কেনো?
প্রিয় মাতৃভূমিতে আমরা প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হতে দেখি অমুক ডাক্তারের অযত্নে, অবহেলায় এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগী অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। যদিও অনেক ভালো ডাক্তার এখানে প্র্যাকটিস করেন, তাদের কথা বলাই বাহুল্য। কখনও শুনি বাম পায়ের জায়গায় ডান হাতের অপারেশন করেছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের দিকে যদি লক্ষ্য করি তাদের কেউ কি বিদেশী চিকিৎসা গ্রহণ করেন, আমরা তো এরকম খবর সাধারণত খবরের কাগজে দেখি না।
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও তো আশা করতে পারি যে, রোগ যত কঠিনই হোক না কেনো, আমার চিকিৎসা আমার দেশেরই কোন হাসপাতালে হবে এবং দ্রুততম সময়ে আমি সেরে উঠবো।
তাই আমাদের এমন চিকিৎসক, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং চিকিৎসা কেন্দ্র প্রয়োজন যেখানে বাংলাদেশের সাধারণ জনতা, আবাল-বৃদ্ধ বনিতা, সমাজের উঁচু নিচু সকলেরই সঠিক চিকিৎসা হবে।
যুগোপযোগী যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সেরকম চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, আসুন আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশের জনগণকে ভালোবাসি এবং নিজের সবটুকু দিয়ে এ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাই, যাতে আর কাউকে সুস্থ হওয়ার জন্য বিদেশী চিকিৎসা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে না হয়।
সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে প্রতিবছর চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে টাকার পরিমাণ ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, যা কি-না জাতীয় বাজেটের শতকরা ৫.১৯ ভাগ । অর্থাৎ আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ টাকার পরিমাণের চেয়েও বেশি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।
পাশ্চাত্য বিশ্বের কথা বাদই দিলাম, আমাদের নিকটবর্তী পৃথিবীর অনান্য দেশ এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে, যেমন ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। তাই আমাদের দেশে যেদিন সবাই চিকিৎসার জন্য নিজের দেশের উপর নির্ভর করতে পারবেন, সেদিন আমাদেরই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আমাদেরই থাকবে, আমাদের দেশ হবে আরো বেশি স্বনির্ভর ।
বাংলাদেশ চিকিৎসকদের তিনটি পেশাজীবি সংগঠন আছে, ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ), স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ) এবং এনডিএফ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিভ ফোরাম)। এ সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তি তথা সকলের ভেবে দেখা দরকার, দেশকে ভালবাসলে দেশেই সত্যিকারের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে কাউকেই বিদেশে যেতে না হয় ।
স্বাস্থ্য খাতের ব্যর্থতার দায় কার? যদিও সর্বোপরি দায় রাষ্ট্র পরিচালনায যারা করেন তাদের। এককভাবে আসলে কারোরই দায় নয়, এ দায় আমাদের সকলের।
দেশের ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে দুটি পরামর্শ দিয়ে আমার আজকের লেখার পরিসমাপ্তি করবো:
১. স্বাস্থ্য খাতের বিদ্যমান অবস্থা উন্নতিকল্পে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত হবে স্বাস্থ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে।
২. সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ তারা সকলেই বাধ্যতামূলকভাবে স্বদেশেই (শুধুমাত্র যে সকল ক্ষেত্রে আমাদের এখানে চিকিৎসা একেবারেই সম্ভব নয় সেসব ক্ষেত্রে ব্যতীত) বাধ্যতামূলকভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন।
লেখক:
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।