বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ
স্টারলিংককে লাইসেন্স প্রদান
স্টারলিংকের উচ্চগতির ইন্টারনেট লোডশেডিংয়ের সময়ও বন্ধ হবে না, যা সাধারণ আইএসপি’র ক্ষেত্রে ঘটে। মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারি ব্যাকআপ ফুরিয়ে গেলে মোবাইল ইন্টারনেটেও সমস্যা হয়, কিন্তু স্টারলিংকের ক্ষেত্রে এমনটি হবে না।

মার্কিন নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৮ এপ্রিল ২০২৫) তিনি এ লাইসেন্স অনুমোদন করেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে এ বৈশ্বিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত ২৫ মার্চ “Non-Geostationary Orbit (NGSO) Satellite Services Operator in Bangladesh” শীর্ষক লাইসেন্সিং গাইডলাইন জারি করে। এ গাইডলাইনের আওতায় স্টারলিংক প্রয়োজনীয় ফি ও কাগজপত্রসহ বিটিআরসি’র কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। গত ২১ এপ্রিল বিটিআরসি’র ২৯৪তম কমিশন সভায় স্টারলিংকের লাইসেন্স ইস্যুর নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের উপর্যুপরি ইন্টারনেট বন্ধের প্রতিবাদে স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনার দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছিলো। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে স্বউদ্যোগে স্পেসএক্স’র সিইও ইলন মাস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান। এ লক্ষ্যে বিডা, বিটিআরসি, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সমন্বিতভাবে কাজ করেছে
স্টারলিংকের সেবা বাংলাদেশের হাওর-বাঁওড়, দুর্গম পার্বত্য এলাকা এবং উপকূলীয় দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। ফয়েজ তৈয়ব বলেন, স্টারলিংকের উচ্চগতির ইন্টারনেট লোডশেডিংয়ের সময়ও বন্ধ হবে না, যা সাধারণ আইএসপি’র ক্ষেত্রে ঘটে। মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারি ব্যাকআপ ফুরিয়ে গেলে মোবাইল ইন্টারনেটেও সমস্যা হয়, কিন্তু স্টারলিংকের ক্ষেত্রে এমনটি হবে না।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ টেলিযোগাযোগ টাওয়ার এখনও ফাইবার নেটওয়ার্কের বাইরে, যেখানে সীমিত ধারণক্ষমতার মাইক্রোওয়েভ সেবা ব্যবহৃত হয়। স্টারলিংক এ সমস্যার সমাধান করবে এবং মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করবে। এর ফলে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি হবে এবং কমিউনিকেশন খাতে ডিরেগুলেশনের সূচনা হবে।
ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি স্টারলিংককে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস), মেশিন-টু-মেশিন কমিউনিকেশন, ব্যাকহল সেবা এবং অন্যান্য সেবা প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে, তবে ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) বা আন্তর্জাতিক মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়নি। লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী, স্টারলিংককে স্থানীয় গেটওয়ে এবং আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ট্রাফিক পরিচালনা করতে হবে।
স্টারলিংকের এ সেবা বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামোকে আধুনিকায়ন করবে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। তবে, সেবার মূল্য নির্ধারণ এবং আবহাওয়াজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা স্টারলিংকের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সবার দেশ/কেএম