ভূমিকম্পের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, মানবিক বিপর্যয়
মৃত্যুপুরী মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে
এখনও পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকের মধ্যে জীবিত থাকার আশা কম। জীবিতদের উদ্ধার করতে অবিরাম চেষ্টা চলছে, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা যে ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা কোনোভাবেই সহজ নয়।

প্রবল ভূমিকম্পে মিয়ানমার যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে মিয়ানমারের একটি বৃহত্তম ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। ভূমিকম্পের শক্তি এবং তার প্রভাব এতই বিপর্যয়কর ছিলো যে, শুধু মিয়ানমারেই নয়, প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের মধ্যে এ কম্পন গভীরভাবে অনুভূত হয়েছে।
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালে ভূমিকম্পের উৎসস্থলের একেবারে কাছে অবস্থিত এবং এখানেই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শহরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা তীব্র পরিশ্রম করে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনেক মানুষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। একজন উদ্ধারকর্মী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, যা একটি ভয়ানক এবং ক্লান্তিকর কাজ।
এমনকি মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডও এ ভূমিকম্পের তীব্র প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন হাইরাইজ ভবন ধসে পড়েছে, যেখানে প্রায় ১০০ শ্রমিক আটকা পড়েছেন। আপাতত ৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, তবে বাকিদের অবস্থাও অজানা। উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতি দিনদিন জটিল হয়ে উঠছে।
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের পরিস্থিতি খুবই সংকটময়। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে, যা তাদের জন্য একটি বিরল পদক্ষেপ। সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তারা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। এমন অবস্থায় দেশটির পক্ষ থেকে সহায়তা চাওয়া একটি অস্বাভাবিক ঘটনা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কঠোরভাবে দেশটি পরিচালনা করছে, এবং অভ্যন্তরীণ নাগরিক সমাজের অনেকটাই অক্ষমতার কারণে এ বিপর্যয়ের সঠিক পরিমাণ ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়া খুবই কঠিন। স্থানীয় প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজের উদ্যোগেও পরিস্থিতি মোকাবিলা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।
এখনও পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকের মধ্যে জীবিত থাকার আশা কম। জীবিতদের উদ্ধার করতে অবিরাম চেষ্টা চলছে, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা যে ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা কোনোভাবেই সহজ নয়। ধ্বংসস্তূপ সরাতে, আহতদের উদ্ধার করতে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন।
বিশ্ব সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে দ্রুত মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে, তবে মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ সহায়তা পৌঁছানোর পথে বাধা হতে পারে। সামরিক সরকারের রাজনৈতিক একঘরে পরিণত হওয়া, নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে এ সহায়তা সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং পৌঁছানো খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে, এসব সত্ত্বেও মানবিক দিক দিয়ে সাহায্য পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি।
মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পরবর্তী দিনগুলোতে উদ্ধার অভিযান আরও তীব্র হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সাহায্য এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবে, মিয়ানমারের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সময়সাপেক্ষ এবং প্রতিরোধের আরও অনেক কাজ বাকি।
সবার দেশ/কেএম