Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:০৪, ৩০ মার্চ ২০২৫

মুসলিম বিশ্ব ঈদ আনন্দে হাসে গাজা রক্তের বন্যায় ভাসে

মুসলিম বিশ্ব ঈদ আনন্দে হাসে গাজা রক্তের বন্যায় ভাসে
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। পবিত্র রমজান মাস শেষে রোজা ভঙ্গের পর মুসলিম বিশ্বে এক আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু এ ঈদ উৎসব গাজার জন্য শুধুমাত্র এক গভীর কষ্টের স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজার মানুষের জন্য ঈদ যেনো এক কেবল এক অন্ধকার রাতের স্মৃতি, যেখানে শান্তি ও আনন্দের পরিবর্তে বিরাজ করছে যুদ্ধ, রক্ত, ক্ষুধা, অর্তনাদ,  শোকের  মাতম এবং আতঙ্কের পরিবেশ।

গাজা, যেখানে ইসরাইলের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে, সেখানে ঈদুল ফিতরের আনন্দ বিলুপ্ত। গত ১৮ই মার্চ থেকে ইসরাইল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গাজায় একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। এ সময়ে, প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয় এবং ১৯৮৪ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গাজার হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারণ ইসরাইলের অবরোধের কারণে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে মানুষের শরীরে রক্তাক্ত ক্ষত, অন্যদিকে অন্যদিকে খাদ্য সংকট – গাজাবাসী এখন বাঁচার জন্য লড়াই করছে।

এতে আরও একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটি হলো মানবিক সহায়তার অভাব। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাদের মতে, এ সময়ের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ পুষ্টিহীনতা এবং খাদ্যাভাবের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পবিত্র ঈদে যখন মুসলমানরা খাবার, নতুন পোশাক এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়, গাজাবাসীরা সে দিনেও খাবার যোগাড় করতে পায় না।

ইসরাইলের অভিযানের ফলে গাজার শোচনীয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে আহতদের জন্য জায়গা নেই, ওষুধের অভাব, সার্জনরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য, তবে প্রায়ই তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। গাজার নাগরিকরা পীড়িত অবস্থায় রয়েছে, হাসপাতালগুলোতে রয়েছে ভয়াবহ জনসংখ্যার চাপ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছানোর কোন ব্যবস্থা নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং রাষ্ট্রনেতারা এর বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানালেও, ইসরাইল তার কর্মকাণ্ড থামাতে প্রস্তুত নয়। গত বছরের নভেম্বরে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রথমবারের মতো বৈরুতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। দক্ষিণ লেবাননেও হামলা অব্যাহত রাখে তারা।

যদিও মুসলিম বিশ্ব ঈদের দিনকে আনন্দের দিন হিসেবে পালন করছে, কিন্তু গাজার মানুষদের জন্য ঈদ আসলে নিরন্তর কষ্ট। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের নেতারা তাদের প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থন জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ৩০ মার্চ আল-কুদস দিবস উপলক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের হামলাকে গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে শ্লোগান দিয়েছেন, ‘বর্ণবাদ: দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য খারাপ, ফিলিস্তিনের জন্যও খারাপ’।

এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা জানায়, তারা ইসরাইলের গণহত্যা এবং নিরপরাধ মানুষদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারা বলছেন, বিশ্ব সম্প্রদায় কেন গাজার এ মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে শিথিল হচ্ছে। তারা আরও দাবি করেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।

গাজার জীবনযাত্রার প্রতিটি অংশ আজ যুদ্ধের আবহে ঢুকে গেছে। বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, মানুষের হাতে কোনো খাবার নেই, ছোট শিশুরা বাবা-মা হারিয়ে একে অপরের শরণাপন্ন হয়েছে। স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ঈদুল ফিতরের দিনটিতে, যেখানে অন্য মুসলমানরা পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে, সেখানে গাজার বাসিন্দারা কেবল রক্ত ও ক্ষত নিয়েই বেঁচে আছেন। তারা কীভাবে ঈদ উদযাপন করবে, তা এক ভয়াবহ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে প্রতিবাদ হলেও, গাজার এ পরিস্থিতিতে অনেক রাষ্ট্রনেতা নীরব। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সবার কাছে এ মানবিক সংকট নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। তবে, তাদের কার্যক্রমের প্রভাব খুব কমই পড়ছে। ফিলিস্তিনিরা আজও ন্যায্য অধিকার ও শান্তির জন্য সংগ্রাম করছে।

গাজার শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রায় ৭৫,০০০ শিশু যুদ্ধের কারণে আহত হয়েছে এবং তাদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে ট্রমায় ভুগছে। যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে তাদের জীবন আজ অন্ধকার। স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে তারা রক্তাক্ত ভূমিতে পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের কষ্টের কথা জানতে পেরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন নির্বিকার।

ঈদের দিন, যেখানে পৃথিবীজুড়ে মুসলিমরা একে অপরকে আনন্দের সঙ্গীতে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, সেখানে গাজা শোকের ছায়ায় নিমজ্জিত। গাজার শান্তি ও আনন্দ এখনও একটি দূরের স্বপ্ন, যেখানে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ চলছে। গাজার মানুষের জন্য ঈদ শুধুমাত্র এক দুঃস্বপ্ন, একটি সময় যেখানে একে অপরকে সাহায্য করা, কষ্টের সঙ্গী হওয়া ছাড়া আর কিছুই সম্ভব নয়।

এ পরিস্থিতিতে, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং শান্তির পক্ষে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না গাজার এই রক্তপাত বন্ধ হবে, ঈদের আনন্দ সত্যিকারের আনন্দে পরিণত হবে না।

সবার দেশ/কেএম