Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৩০ মার্চ ২০২৫

চারিদিকে শুধু ধ্বংসস্তুপ আর প্রিয়জনের লাশের গন্ধ

অভিভাবকহীন, খাদ্যহীন গাজার ঈদ

এ শিশুরা ঈদের মানে ভুলে গেছে! তাদের জীবনে ঈদ মানে কি আনন্দ? তাদের কাছে ঈদ মানে মুক্তি, স্বাধীনতা। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। একটুকরো স্বাধীন জন্মভূমি। সে অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে গণহত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

অভিভাবকহীন, খাদ্যহীন গাজার ঈদ
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা মানুষ, তখন গাজার শিশুরা একটু খাবারের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ পবিত্র রমজান শেষে ঈদের খুশিতে মেতে উঠলেও গাজার মানুষ সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত। ঈদ তাদের জন্য আরেকটি শোকের দিন হয়ে এসেছে। 

ইসরায়েলিদের বর্বর হামলায় তাদের স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে তারা আজ বেঁচে আছে মানবিক সহায়তা ও আল্লাহর দয়ার ওপর ভরসা করে। এ শিশুরা ঈদের মানে ভুলে গেছে! তাদের জীবনে ঈদ মানে কি আনন্দ? তাদের কাছে ঈদ মানে মুক্তি, স্বাধীনতা। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। একটুকরো স্বাধীন জন্মভূমি। সে অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে গণহত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

গাজায় ঈদের দিনেও হামলা, নিহত ৯

পবিত্র ঈদের দিনেও রেহাই পায়নি গাজার নিরীহ মানুষ। ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় আজ কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫ জনই শিশু। গাজার হাসপাতালগুলোতে আর জায়গা নেই। আহতদের চিকিৎসা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম কিছুই নেই। প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে, কিন্তু শোক করারও সময় নেই গাজার মানুষদের।

যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে নেতানিয়াহুর গড়িমসি

গাজার এ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন একটি যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে মিশর ও কাতার। হামাস এ পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বললেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর বিপরীতে একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে এখনো যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

খাদ্য সংকটে চরম বিপর্যয়ে গাজার মানুষ

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) হিসাব অনুযায়ী, তাদের হাতে যে পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে, তা দিয়ে গাজার মানুষকে মাত্র ১০ দিনের জন্য খাবার সরবরাহ করা সম্ভব। ইসরাইল অবরোধ না তুললে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মারা যাবে। ইতোমধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।

গাজার ভয়াবহ মৃত্যুর পরিসংখ্যান

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০,২৭৭ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে ১,১৪,০৯৫ জন। অন্যদিকে গাজার মিডিয়া অফিস প্রায় দুই মাস আগে জানিয়েছিলো যে, নিহতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক লাশ চাপা পড়ে আছে, যার হিসাব করা সম্ভব নয়।

পশ্চিম তীরেও ইসরাইলি বর্বরতা অব্যাহত

গাজার পাশাপাশি দখলীকৃত পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অনলাইন সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের তাম্মুন শহরে ২২ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলো বলে সন্দেহ করা হচ্ছিলো।

লোহিত সাগরে হুতিদের প্রতিরোধ

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। গত ২৪ ঘণ্টায় লোহিত সাগরে তিন দফা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ হ্যারি ট্রুম্যানের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা। হুতির এক মুখপাত্র টেলিগ্রামে জানান, ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। যতদিন গাজার ওপর অবরোধ চলবে, ততদিন আমরা আমাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাবো।

হুতি নেতার ঈদ বার্তা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন হুতি নেতা আবদুল মালিক বদর আল দিন আল হুতি। তিনি ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য আমরা সবসময়ই দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন দিয়ে যাবো। ঈদের দিনে গাজায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তাদের বর্বরতা আরও একবার প্রমাণ করলো।

গাজাবাসীর জন্য ঈদ মানেই বেঁচে থাকার লড়াই

গাজার মানুষের কাছে ঈদ মানে এখন আনন্দ নয়, বরং বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ঈদুল ফিতরের দিনে তারা একটুকরো রুটি আর একটু নিরাপত্তার আশায় তাকিয়ে আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে। বিশ্ববাসী যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা এ নিরীহ ফিলিস্তিনিরা কবে মুক্তির স্বাদ পাবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

সবার দেশ/কেএম