‘লাল আর গেরুয়া এক হয়ে গেছে’, মুসলিমদের পাশে থাকার বার্তা মমতার
‘হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে’ তোপ দাগালেন মমতা
মমতা আরও বলেন, আমি রামকৃষ্ণের ধর্ম মানি, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম মানি। কিন্তু জেনে-বুঝে একটা ‘নোংরা ধর্ম’, যেটা এ ‘জুমলা পার্টিরা’ বানিয়েছে, সেটা মানি না। ওটা হিন্দু ধর্মবিরোধী।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ তুলেছেন। ঈদুল ফিতরের দিন কলকাতার রেড রোডে নামাজের পর এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি মুসলিমদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন এবং বিজেপি ও বাম দলগুলোর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ আনেন।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রেড রোডে ঈদের নামাজ শেষে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মমতা। সেখানে তিনি বলেন, লাল এবং গেরুয়া দুই রাজনৈতিক দল এক হয়ে গেছে। আমরা একাই একশো।
তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিজেপি ও বাম দলগুলোর মধ্যে গোপন আঁতাতের ইঙ্গিত দেন। তিনি আরও বলেন, সব হিন্দু আপনাদের বিরুদ্ধে নয়, কিছু নেতা এ নিয়ে ব্যবসা করেন। ওই দোকান আমি বন্ধ করে দেবো।
হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, আমাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনি কি হিন্দু? আমি বলেছি, আমি হিন্দু, আমি মুসলিম, আমি শিখ, আমি খ্রিস্টান, আমি ভারতীয়।
তিনি আরও বলেন, আমি রামকৃষ্ণের ধর্ম মানি, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম মানি। কিন্তু জেনে-বুঝে একটা ‘নোংরা ধর্ম’, যেটা এ ‘জুমলা পার্টিরা’ বানিয়েছে, সেটা মানি না। ওটা হিন্দু ধর্মবিরোধী।
মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ এনে বলেন, এরা কী চায়? ডিভাইড অ্যান্ড রুল চায়? আমি চাই না। আমার জীবন দেশের জন্য উৎসর্গিত। আমার জীবন সমস্ত ধর্ম-জাতির জন্য, সমস্ত সম্প্রদায় ও সমস্ত পরিবারের জন্য। আপনারা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো।
তিনি মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এটা ভাববেন না যে আপনারা একা। আমরা সব রকমভাবে আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সঙ্গে কেউ কিছু করতে পারবে না, এটা কখনো ভাববেন না।
মমতা বলেন, আমি দাঙ্গা চাই না। কেউ প্ররোচনা দিলে তার পায়ে পা লাগাবেন না। এটাই ওদের পরিকল্পনা। এটা ওদের প্ল্যান্টেড গেম। এই ফাঁদে পা দেবেন না। ওদের ছুঁয়াও উচিত নয়। ওদের ছুঁলে ওরা গুরুত্ব পেয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ওরা আপনাকে কিছু বললে মনে রাখবেন, দিদি আমাদের সঙ্গে আছেন। আপনাদের পাশে গোটা সরকার আছে।
মমতা বলেন, মণিপুরে, উত্তরপ্রদেশে, বিহারে ও রাজস্থানে কী হয়েছে, সেটা সবাই দেখেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে। সংবিধান আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা দেয়, কিন্তু ওরা সেটাকে ধ্বংস করতে চায়।
তিনি বাংলার ঐতিহ্যময় ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এ বাংলা সম্প্রীতির বাংলা, এখানে কোনও বিভাজন নেই।
মমতার এ বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারতজুড়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। তার এ বক্তব্যকে বিজেপির বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত প্রচারণা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম ভোটারদের পাশে টানতেই মমতা এ বক্তব্য দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঈদের দিনে দেয়া মমতার বক্তব্য বিজেপির বিরুদ্ধে তার অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে। একদিকে তিনি মুসলিমদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অন্যদিকে বিজেপি ও বামদের এক হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণ নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এ বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
সবার দেশ/কেএম