উত্তাল ঢাকা-ওয়াশিংটন-আঙ্কারা-রাবাত
গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ

ইসরায়েলের গণহত্যা ও সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ব। ফিলিস্তিনের গাজায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা সহিংস সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুরস্ক, বাংলাদেশ থেকে মরক্কো—দুনিয়া জুড়ে চলছে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ।
ওয়াশিংটনে ‘ফিলিস্তিন মুক্তির’ মিছিল, ইহুদি শান্তিকামীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ
শনিবার ওয়াশিংটনের রাজপথে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা ছিল—
- ‘From the River to the Sea, Palestine will be Free’
- ‘Ceasefire Now, End the Occupation’
এ মিছিলে প্যালেস্টাইনিয়ান ইউথ মুভমেন্ট, জিউয়িশ ভয়েস ফর পিস-সহ ৩ শতাধিক সংগঠন অংশ নেয়। আশ্চর্যের বিষয়, ইহুদি শান্তিকামীদের একাধিক গ্রুপের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো এখানে। এ প্রতিবাদে খ্রিস্টান ও মুসলিম নাগরিকদের পাশাপাশি ছিলেন হাজারো সাধারণ মার্কিনি।
আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও: ট্রাম্প-বাইডেন দুই প্রশাসনকেই কাঠগড়ায়
রোববার তুরস্কজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন:
- ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক!’
- ‘জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর—স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই!’
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় চ্যানেল TRT জানিয়েছে, এ বিক্ষোভে প্রায় ২০ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মিছিল, নেতৃত্বে ছিল ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স’
বাংলাদেশেও থেমে থাকেনি প্রতিবাদ। ঢাকার রাস্তায় নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংগঠক ফ্রান্সিস ফরিদ বলেন, গাজায় যা হচ্ছে তা সরাসরি যুদ্ধাপরাধ। এটা কেবল যুদ্ধ নয়, এটি একটা মানবিক বিপর্যয়।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়।
মরক্কোর রাবাতে লাখো মানুষের মিছিল, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গর্জন
উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয় মরক্কোর রাজধানী রাবাতে। লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভে উপস্থিত মোহাম্মদ তৌসি বলেন, ইসরায়েল এখন গাজাকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চাইছে। বাইডেন এ ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে রাখঢাক করছে, ট্রাম্প সেটা করছে প্রকাশ্যে।
এ মিছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—উভয় দেশের প্রশাসনের প্রতি ছিলো সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
গণহত্যার অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক চাপ
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হঠাৎ হামলার পর ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তা ১৮ মাস পার করলেও থেমে নেই। মাত্র ১৫ দিনের দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে নিহত হয়েছেন ১,০০০+ ফিলিস্তিনি।
বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ জন জীবিত আছেন। ইসরায়েলের ভাষ্য, জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।
তবে জাতিসংঘ, আইসিজে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার আহ্বান জানালেও ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
আইসিজেতে গণহত্যার মামলা: ইসরায়েল আসামির কাঠগড়ায়
ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের হয়েছে।
জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, গাজায় যা হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের সব সীমা অতিক্রম করেছে।
এটা শুধু ফিলিস্তিনের লড়াই নয়—মানবতার অস্তিত্বের প্রশ্ন
বিশ্ববাসী বুঝতে পারছে—এ যুদ্ধ কেবল ভূখণ্ড বা ধর্মের নয়, মানবিকতা বনাম বর্বরতার লড়াই।
বিশ্বব্যাপী চলমান এ বিক্ষোভের ঢেউ এখন শুধু রাজনীতি নয়, জীবনের পক্ষে ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী বিদ্রোহ। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, আলজাজিরা, ইরনা
সবার দেশ/কেএম