Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২০, ৭ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিলের ঝড়

৫ বাংলাদেশিসহ ৪০০ শিক্ষার্থীর মার্কিন ভিসা বাতিল

৫ বাংলাদেশিসহ ৪০০ শিক্ষার্থীর মার্কিন ভিসা বাতিল
ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত চার শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন অন্তত পাঁচজন।

মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, এ শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে 'সহিংস কর্মকাণ্ডে' জড়িয়ে পড়েছিলেন। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে যেসব শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে সহিংসতায় যুক্ত ছিলো, তাদের শনাক্ত করেছি এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশি ছাত্রদের ভিসা বাতিল: আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

জানা গেছে, যেসব বাংলাদেশি ছাত্রদের ভিসা বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি সিলেট, দু’জনের ঢাকা এবং একজনের বাড়ি বগুড়ায়। বিষয়টি সামনে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানিয়েছেন, আমি একজন ছাত্রের ভিসা বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমরা তার পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছি এবং সে আদালতে আবেদন করেছে। তবে প্রাইভেসির কারণে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের এখন অত্যন্ত সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হবে। আইন ভঙ্গ করা যাবে না এবং স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ যেন শেষ না হয়ে যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

হাভার্ড, বার্কলি, কেন্ট স্টেটেও ভিসা বাতিলের ঘটনা

ভিসা বাতিলের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন সদ্য গ্র্যাজুয়েটের ভিসা বাতিল করে ডিপোর্টেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি, মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব অ্যাক্রন ও বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৪৮ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

কিছু শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারেও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি গত সপ্তাহে এক নির্দেশনায় বলেছে— ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ দিনের মধ্যে দেশত্যাগ করতে হবে, নতুবা জোরপূর্বক ডিপোর্ট করা হবে।

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, প্রশ্ন তুলছে অধিকার সংগঠনগুলো

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো এ সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও গণতন্ত্রবিরোধী বলছে। তারা বলেছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়াকে সহিংসতা হিসেবে চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন ও শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী— মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের পরিপন্থী।

ট্রাম্প প্রশাসনের ‘দমননীতি’ অব্যাহত

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার পর থেকেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি ও ভিসা বাতিলের ঘটনাগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে তারা যদি ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেন। একইসাথে, ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের কারণে অনেককে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠলেও, মার্কিন প্রশাসনের এ পদক্ষেপ আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সবার দেশ/কেএম