ট্রাম্পের ট্যারিফ যুদ্ধ - কানাডার নির্বাচনে প্রভাব!
মার্কিন রিপাবলিক পার্টির আশীর্বাদপুষ্ট কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা মিঃ পলিভিয়ের। যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার পণ্য রফতানিতে ২৫% শুল্ক প্রদানের কঠোর নিয়ম করে দেয়ায় কানাডিয়ানরা মিঃ ট্রাম্পের প্রতি ভীষণ অখুশি ।

কোভিড পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ কানাডিয়ানদের ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কবলে ফেলে দেয়। বাড়ির মালিকগণ অধিক হারে সুদ প্রদান ও দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী নাগরিকগণ হাপিয়ে উঠেছিলেন। দলমত ছেড়ে প্রায় সকলেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনায় মুখর হন।
সংসদে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির লিডার পলিভিয়েরের কদর বেড়ে যায় তখন। তার বক্তব্য ও ভূমিকা দেখে বুঝা যাচ্ছিলো যেনো তিনি রাত পোহালেই প্রধানমন্ত্রীর পদটি পেয়ে যাচ্ছেন। পরপর তিনটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ১০ বছর পর দেশের অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে নিজ পার্টির লীডারশিপ ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন জাস্টিন ট্রুডো।
৬০ বছর বয়স্ক মেধাবী অর্থনীতিবিদ ডঃ মার্ক কার্নিকে বিপুল ভোটে পার্টি লিডার নির্বাচিত করে লিবারেল। হার্ভার্ড থেকে অর্থনীতিতে গ্রাডুয়েশন এবং অক্সফোর্ড থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি অর্জন শেষে মিঃ কার্নি ব্যাংক অফ কানাডার গভর্ণর ও ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্ণর পদসহ অনেক নামী-দামী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থনীতি, খেলাধুলা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী তিনি। শিক্ষা ও পেশাগত গুণাগুণে সমসাময়িক নেতাদের চেয়ে শতগুণ এগিয়ে আছেন ডঃ মার্ক কার্নি। গত ৯ই মার্চ ২০২৫ তারিখে জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই আগামী ২৮শে এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। মাত্র কয়েকদিনেই বদলে যায় কানাডার নির্বাচনী চিত্র। বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিলিভিয়ের যেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রায় নিশ্চিত বলে ধরে নেয়া হতো, তা এখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে এসেছে।
কানাডার শক্তিশালী মিডিয়া সিবিসির নির্বাচনী জরিপে এ মুহূর্তে(৬ই এপ্রিল ২০২৫) নির্বাচন হলে ৩৩৮টি আসনের মধ্যে লিবারেল ২০৩টি আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে। পলিভিয়েরে নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি ১১৮টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকবেন। অথচ একই মিডিয়া গত ২০শে জানুয়ারী ২০২৫ এর জরিপে লিবারে মাত্র ২২% ও কনজারভেটিভ ৪৫% সমর্থন রেকর্ড করেছিলো।
শুধু কি শিক্ষা, মেধার ও স্কিলসের কারণেই মার্ক কার্নি এতটা এগিয়ে আছেন? আসলে তেমনটি নয়। ইউএস নির্বাচনে মিঃ ট্রাম্পের ক্ষমতায় আরোহন এবং কানাডার সাথে তার বৈরী আচরণ অনেক বড় নিয়ামক হয়ে দাড়িয়েছে। মার্কিন রিপাবলিক পার্টির আশীর্বাদপুষ্ট কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা মিঃ পলিভিয়ের। যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার পণ্য রফতানিতে ২৫% শুল্ক প্রদানের কঠোর নিয়ম করে দেয়ায় কানাডিয়ানরা মিঃ ট্রাম্পের প্রতি ভীষণ অখুশি । সে সাথে তিনি কানাডা থেকে পণ্য আমদানি হ্রাস করতে গিয়ে ইন্ডিয়ানার গাড়ি উৎপাদন কারখানাকে অধিক হারে চেভি সিল্ভারেডো উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে কানাডার অশোয়াতে অবস্থিত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের গাড়ি উৎপাদনের বিশাল প্লান্টটি সিল্ভারেডো উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
এমনি পরিস্থিতিতে কানাডার নাগরিকগণ একটি অনিশ্চিত অর্থনীতির আশঙ্কা করছেন যা পলিভিয়েরের মতো রাজনীতিবিদকে প্রধানমন্ত্রী করলে তার পক্ষে সামাল দেয়া কঠিন হতে পারে। সম্ভবতঃ একারণেই ঐক্যবব্ধ কানাডিয়ান জাতি মার্ক কার্নির মত জাদরেল অর্থনীতিবিদকে দেশের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছেন। মাত্র তিন সপ্তাহের দায়িত্ব পালনকালে মিঃ কার্নি তেলের মূল্য লিটারপ্রতি প্রায় ২০ সেন্ট কমিয়ে দিয়েছেন। পোল ট্র্যাকিং দেখে বুঝা যাচ্ছে, আগামী ২৮সে এপ্রিল নির্বাচনে তিনিই হবেন কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
লেখক:
এডুকেশান স্পেশালিস্ট
টরোন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড, কানাডা।