Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১১ এপ্রিল ২০২৫

শুল্কনীতিতে ট্রাম্পের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলেছে কী?

শুল্কনীতিতে ট্রাম্পের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলেছে কী?
ছবি: সবার দেশ

ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বেইজিং—সব জায়গায় হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন নতুন এক বৃহৎ শুল্ক পরিকল্পনার, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেয়। অথচ কিছুদিনের মধ্যেই সে পরিকল্পনার বড় অংশ ‘স্থগিত’ হয়ে গেছে।

প্রতিশ্রুতি ছিলো আমেরিকাকে আবার জাগিয়ে তোলার, কিন্তু বাস্তবতা হলো—ট্রাম্পের শুল্কনীতি এখন এক অনিশ্চিত পরীক্ষা।

বলা হচ্ছে, এতে করে তিনি একদিকে যেমন কিছু চুক্তির সম্ভাবনা জাগিয়েছেন, তেমনি ঘরোয়া শিল্প ও নিম্নআয়ের জনগণকে ফেলে দিয়েছেন অনিশ্চয়তায়।

শুল্কনীতি দিয়ে ট্রাম্পের ৫ লক্ষ্য: অর্জনের হিসাব

১. ‘ন্যায্য চুক্তির’ বুলি, আর বাস্তবে চাপের কৌশল

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, আমেরিকা বিশ্বের অন্যান্য দেশের দ্বারা শোষিত হয়েছে।
তার মতে, ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কয়েকটি দেশের জন্য আরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে তিনি এ শোষণের জবাব দিচ্ছেন।

বিশ্বের অন্তত ৭৫টি দেশের নেতারা এখন তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী বলে দাবি হোয়াইট হাউজের।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে কথাবার্তা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, ‘চুক্তির টেবিলে সবাই আসছে—আমরা জিতছি।’

২. ঘরোয়া শিল্প খাত: ঘোষণা যত জোরালো, বাস্তবতা তত দুর্বল

শুল্ক দিয়ে দেশীয় শিল্পকে চাঙ্গা করবেন—এ ছিলো তার মূল লক্ষ্য। কিন্তু বারবার অবস্থান পাল্টানোর ফলে শিল্পপতিরা বিনিয়োগে দ্বিধান্বিত।

একদিন গাড়ি শিল্পকে রক্ষা, আরেকদিন ইলেকট্রনিক্সে শুল্ক—নির্দেশনায় ধারাবাহিকতা না থাকায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘এটা কোনো নীতি না, এটা লটারি!’

৩. চীনের সঙ্গে যুদ্ধ: পুরনো শত্রু, নতুন নাটক

চীনকে ট্রাম্প সবসময়ই বাণিজ্যের ‘চিটিং পার্টনার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, ‘চীন আমাদের ঠকিয়েছে, আমি বদলা নিচ্ছি।’

তবে এবার তিনি চীন নয়, বরং মার্কিন পুরনো নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন এ পরিস্থিতির জন্য। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের সঙ্গে শক্ত অবস্থান নেয়া যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিকভাবে আরো নিঃসঙ্গ করে ফেলতে পারে।

৪. রাজস্ব আয়: কল্পনায় ট্রিলিয়ন, বাস্তবে ঘাটতির পাহাড়

ট্রাম্প বলছেন, শুল্কের মাধ্যমে ১০ বছরে ২ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসবে। কিন্তু তারই প্রশাসনের করছাড়ের ফলে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হবে—এ তথ্য জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এক হাতে রাজস্ব আনছেন, অন্য হাতে দ্বিগুণ বের করে দিচ্ছেন।

৫. পণ্যের দাম কমানো? বরং বেড়েছে খরচ!

ট্রাম্পের দাবি—দেশীয় উৎপাদন বাড়বে, প্রতিযোগিতা হবে, ফলে দাম কমবে। কিন্তু গবেষণায় উল্টো চিত্র।
১০ শতাংশ শুল্কে প্রতি পরিবার বছরে গড়ে অতিরিক্ত ১,২৫৩ ডলার ব্যয় করছে। নিম্নআয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, আর বিশ্লেষকরা বলছেন—এটা ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।

ট্রাম্প দাবি করছেন, এ শুল্কই যুক্তরাষ্ট্রকে আবার জাগিয়ে তুলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—চুক্তি এখনও হয়নি, শিল্পপতিরা আশ্বস্ত নন, রাজস্ব ও মূল্যস্ফীতির হিসাবও যাচ্ছে গড়বড় হয়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক দিয়ে গর্জন শোনা গেলেও, বজ্রপাতটা এখনও হয়নি। বরং ঘরে আগুন ধরেছে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, ফোর্বস, ব্লুমবার্গ

সবার দেশ/এমকেজে