বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনি সংহতির ঢেউ
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্মম সামরিক আগ্রাসন ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শনিবার (১২ এপ্রিল) ব্যাপক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক এ বিক্ষোভে লাখো মানুষ অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সমাবেশের খবর বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, যেখানে বিক্ষোভের বিশালতা, শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি এবং বৈশ্বিক সংহতির বার্তা উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন
এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি):
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় এক লাখ মানুষ জমায়েত হয়ে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানান। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি পতাকা ও প্রতীকী কফিন বহন করে "ফ্রি ফিলিস্তিন" স্লোগান দেন। এপি আরও জানায়, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থনের প্রতিবাদে তাদের ছবি পুড়িয়েছে কিছু অংশগ্রহণকারী।
আরব নিউজ:
সৌদি আরবের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ ঢাকার সমাবেশকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ’ আখ্যা দেয়। তাদের দাবি, এ সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেন, যা ফিলিস্তিনি সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের গভীর সংহতি প্রকাশ করে।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট:
ব্রিটিশ সংবাদপত্রটি জানায়, শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা গাজায় শিশু ও নারী হত্যার নিন্দা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট:
মার্কিন এ পত্রিকা হাইলাইট করে যে, বাংলাদেশের মতো ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই—এমন একটি দেশেও ফিলিস্তিনি সংহতির জোয়ার দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের অবরোধ অবিলম্বে তুলে নেয়া এবং জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
টাইমস অব ইসরাইল:
ইসরাইলের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমটি এপির বরাত দিয়ে ঢাকার সমাবেশের খবর প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশীরা ট্রাম্প-মোদি-নেতানিয়াহুর ছবি পুড়িয়ে ইসরাইলি নীতির তীব্র নিন্দা জানায়।
আল-জাজিরা:
কাতারভিত্তিক এ মিডিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিক্ষোভের চিত্র সম্প্রচার করে এবং জোর দেয় বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ফিলিস্তিনপ্রীতি ও মানবতাবাদী অবস্থানের উপর।
বিক্ষোভের মূল বার্তা
- গাজায় ১৮ মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা।
- ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ ইসরাইলি মিত্রদেশগুলোর ভূমিকার সমালোচনা।
- জাতিসংঘ ও ওআইসিকে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান।
বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থক এবং ইসরাইলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ন্যায়বিচারের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন।
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
ঢাকার এ সমাবেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। ইয়েমেন, পাকিস্তান, লিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় একই দিনে অনুরূপ বিক্ষোভ দেখা যায়।
ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অটল সংহতির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার আন্দোলনের একটি শক্তিশালী অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিক্ষোভকারীদের বার্তা—‘নিরাপত্তার নামে গণহত্যা নয়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাই একমাত্র সমাধান।’
সবার দেশ/এমকেজে